চট্টগ্রাম মোহামেডানের বিপক্ষে বড় জয় দিয়েই নতুন মৌসুমের মিশন শুরু করেছে বসুন্ধরা কিংস
স্বাধীনতার আগে কিংবা পরে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ছিল ঢাকার ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী দল। ধীরে ধীরে তাদের শক্তি কমেছে। পেশাদার ফুটবলের যুগে এবারই প্রথম প্রিমিয়ার লিগে উঠেছে ক্লাবটি। তবে পেশাদার ফুটবলে তাদের অভিষেকটা একেবারেই বাজে হয়েছে। শুরুটা হয়েছে বিশাল ব্যবধানে হারের লজ্জা দিয়ে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) নিজেদের প্রথম ম্যাচে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে হেরেছে শোচনীয়ভাবে।
গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে তারা উড়ে যায় ৬-০ গোলে। ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ খ্যাত মোহামেডানের অধিনায়ক ও মালির ফরোয়ার্ড সুলেমানে দিয়াবাতে করেছেন জোড়া গোল। মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড ২-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবকে। এদিকে কিংস এ্যারেনায় অনুষ্ঠিত অপর ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস।
১৯৪৮ সাল থেকে ঢাকায় শুরু হয় ফুটবল লিগের খেলা। তখন সেরা ক্লাবগুলোর মধ্যে ছিল ভিক্টোরিয়া, বিজি প্রেস, আজাদ স্পোর্টিং, ইস্ট পাকিস্তান জিমখানা ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। এদের মধ্যে ক্রমেই সেরা হয়ে ওঠে ওয়ান্ডারার্স। তারাই হচ্ছে প্রথম ক্লাব, যারা সর্বপ্রথম হ্যাটট্রিক লিগ শিরোপা অর্জন করে (১৯৫৩, ৫৪, ৫৫)। আর মোট লিগ জেতে ৭ বার। পরে তাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। পরে মোহামেডান সফলতার বিচারে ছাড়িয়ে যায় ওয়ান্ডারার্সকে। স্বাধীনতার আগে মোহামেডান ৭ বার ও স্বাধীনতার পরে ১২ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও স্বাধীনতার পর ওয়ান্ডারার্স আর একবার চ্যাম্পিযন হতে পারেনি। এই দুদলের সর্বশেষ মোকাবিলা হয়েছিল ১৯ বছর আগে, ২০০৫ মৌসুমের লিগে। সেবার দুদলের স্কোরলাইন ছিল গোলশূন্য ড্র।
দেশের ফুটবলে একটি ইতিহাস ওয়ান্ডারার্স। ১৯৫০-৬০ সাল পর্যন্ত এক দশকে ঢাকার ফুটবলে সাতবার প্রথম বিভাগ লিগে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। স্বাধীনতার পর যেন হারিয়েই গিয়েছিল মতিঝিল পাড়ার এই ক্লাবটি। নব্বয়েই দশকে দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায় এবং বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী হারায় ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি। ১৯৮৭ সালে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মোহামেডানের কাছে হেরে তারা রানার্সআপ হয়। সাদা কালোদের সঙ্গে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম ঘরোয়া ক্লাব প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখা হতো। সেই মোহামেডানের কাছে ফের হার দিয়ে শীর্ষ লিগ শুরু করলেন তারা।
১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে ফের নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় ওয়ান্ডারার্স। ওই বছর রানার্সআপ হয়ে প্রথম বিভাগে জায়গা করে নেয়। ২০১৮-১৯ সালে সিনিয়র বিভাগ ফুটবলে রানার্সআপ হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে উঠে। গত বছর পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরের এই লিগে রানার্সআপ হয়ে প্রথমবারের মতো শীর্ষ লিগে জায়গা করে নেয় ঢাকা ওয়ান্ডারার্স। মোহামেডান বিদেশী নিয়ে খেললেও ওয়ান্ডারার্স শুধুই স্থানীয়দের নিয়ে একাদশ গড়েছিল। ফলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি তারা। মোহামেডানের অধিনায়ক মালির ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতে একই দুই গোল করেন। এ ছাড়া দুই বিদেশী নাইজেরিয়ান এমানুয়েল সানডে ও ঘানার বুয়েটং আর্নেস্ট এবং স্থানীয় ফুটবলার রাকিবুল ইসলাম ও সৌরভ দেওয়ান একটি করে গোল করেন।
অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামের মাঠটি নাকি নিম্নমানের ছিল! ম্যাচের ৫ মিনিটে মোহামেডান এগিয়ে যায়। বোয়েটাংয়ের দারুণ এক পাস থেকে ইমানুয়েল বক্সে ঢুকে গোলকিপারের পাশ দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে। ১৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে মোহামেডান। বক্সের বাইরে সরাসরি বল পেয়ে মিনহাজুর আবেদীন রাকিব বাঁ পায়ের জোরালো শটে জাল কাঁপান। ২৪ মিনিটে মোহামেডান দিয়াবাতের গোলে স্কোরলাইন ৩-০ করে। ৮০ মিনিটে মোহামেডান চতুর্থ গোল করে। বক্সের ভেতরে দিয়াবাতের পাসে বোয়েটাং প্লেসিং করে ওয়ান্ডারার্সকে ছিটকে দেন। আর ৮৯ মিনিটে মুজাফফরভের পাসে দিয়াবাতে করেন নিজের দ্বিতীয় গোল। এরপর যোগ করা সময়ে বদলি সৌরভ দেওয়ান দারুণ এক প্লেসিং শটে দলকে ষষ্ঠ গোল এনে দেন।
ব্রাদার্স-পুলিশ ম্যাচে ব্রাদার্স ২৩ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায়। মুস্তাফার পাসে গাম্বিয়ার ফরোয়ার্ড ম্যাডি সিসে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলকিপারের পাশ দিয়ে উঁচু করে জাল কাঁপান।