
জার্মানির ডর্টমুন্ডে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইউরোর সেমিফাইনালে শেষ মিনিটে ইংল্যান্ডের জয়সূচক গোল করেন বদলি ফরোয়ার্ড ওলিভার ওয়াটকিন্স
আরও একবার ফিরে আসার অবিশ্বাস্য গল্প রচনা করল ইংল্যান্ড। উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে বুধবার প্রথমে পিছিয়ে পড়েও বদলি খেলোয়াড় ওলি ওয়াটকিন্সের অতিরিক্ত সময়ের দুর্দান্ত গোলে গ্যারেথ সাউথগেটের দল ২-১ ব্যবধানে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেয় নেদারল্যান্ডসকে। সেইসঙ্গে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা করে নিল থ্রি-লায়ন্সরা। ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে রবিবার স্পেনের মুখোমুখি হবে কেন-বেলিংহ্যামরা। সেই ম্যাচে লা রোজাদের হারাতে পারলেই প্রথমবারের মতো ইউরোর শিরোপা উঁচিয়ে ধরার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়বে ইংল্যান্ড।
১৯৮৮ সালে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ইউরোর শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল হল্যান্ড। এরপর শিরোপা তো দূরের কথা ফাইনালেই খেলতে পারেনি ডাচরা। তবে এবারের আসরের শুরু থেকেই নজরকাড়া পারফর্ম করে সেমিফাইনালের টিকিট কাটে তারা। ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় গ্যাকপো-ডাইকরা। অন্যদিকে গত আসরের ফাইনালিস্ট গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরাও এবার অতীত ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রথমবার ইউরো জিততে মরিয়া।
ডর্টমুন্ডে এমন সমীকরণ নিয়েই বুধবার মিশন শুরু করে দুই দল। তবে শুরুতেই এগিয়ে যায় ডাচরা। ম্যাচের ৭ মিনিটে জাভি সিমন্সের দুর্দান্ত গোলে লিড নেয় নেদারল্যান্ডস। ৩৫ মিটার দূর থেকে ডিক্লান রাইসকে কাটিয়ে অসাধারণ ভলিতে অভিজ্ঞ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে পরাস্ত করেন তিনি। তাতে টানা তৃতীয় ম্যাচে প্রথমে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা পায় ইংল্যান্ড। তবে এদিনও সমতায় ফিরতে খুব বেশি সময় নেয়নি সাউথগেটের শিষ্যরা।
১৮ মিনিটে হ্যারি কেনের একটি শট রুখে দেন বার্ট ভারব্রাগেন। পরের মুহূর্তে তার ভলি বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। কিন্তু এই ভলির আগেই ডেনজেল ড্রামফ্রাইস তার গতিরোধ করলে ভিএআর এর সাহায্যে পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। পেনাল্টি থেকে জোরালো শটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান হ্যারি কেন।
২০২২ সালে কাতার বিশ^কাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেছিলেন হ্যারি কেন। সেই মিসেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় ইংল্যান্ড। এবার কোনো ভুল না করে দলকে ম্যাচে ফেরান ইংলিশ ফুটবলের সেরা স্ট্রাইকার। এরপর এগিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দলই মরিয়া হয়ে উঠে। প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও অনেক সুযোগ তৈরি করে দুই দল। কিন্তু গোলের দেখাটাই যেন মিলছিল না হল্যান্ড-ইংল্যান্ড কারও।
দ্বিতীয়ার্ধের ৭৯ মিনিটে কাইল ওয়াকারের কাটব্যাক থেকে বুকায়ো সাকা ৭৯ বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল করে দেন রেফারি। এরপর ফোডেন ও কেনকে উঠিয়ে ওয়াটকিন্স ও পালমারকে মাঠে নামান ইংলিশ কোচ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৯০ মিনিটে বদলি নামা দুই তারকাই ভাগ্য গড়ে দেন থ্রি-লায়ন্সদের। কোল পালমারের কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করে ইংল্যান্ডকে ফাইনালের টিকিট উপহার দেন ওয়াটকিন্স। আর এই গোলেই বাঁধাভাঙা উল্লাসে মেতে উঠে ইংলিশ শিবির।
অন্যদিকে গোল হজম করে স্টেডিয়াম ভর্তি কমলা সমর্থকরা নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা দলের ট্যাগ গায়ে লাগানো থাকলেও ১৯৬৬ সালে জেতা বিশ্বকাপটাই এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের একমাত্র সাফল্য। তবে দীর্ঘ সময়ের সেই শিরোপা-খরা ঘুচাতে ইংলিশ দলটি এখন মরিয়া। ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা গ্যারেথ সাউথগেটের দল ইউরোর সর্বশেষ আসরে তো ফাইনাল খেলে। কিন্তু তিন বছর আগের সেই ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে যায় তারা।
এবার টানা দ্বিতীয় ইউরোর ফাইনালে ফিডেন-সাকারা। এবার কোনো ভুল করতে চায় না ইংল্যান্ড। যে পথে তাদের বাধা এখন স্পেন। এবারের আসরের অন্যতম সফল দল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে লা রোজাদের। যারা এখন পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে। সেমিফাইনালে ফেভারিট ফ্রান্সকেও ২-১ গোলে পরাজিত করে যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ওলমো-ইয়ামালরা। তবে স্পেন যতই শক্তিশালী দল হোক না কেন? চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন ইতিহাস রচনা করতে প্রস্তুত ইংলিশ কোচ।
সেমির বাধা অতিক্রম করেই গ্যারেথ সাউথগেট জানিয়ে দেন তা। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে যাচ্ছি যারা টুর্নামেন্টের সেরা। তার ওপর প্রস্তুতির জন্য আমরা একদিন সময় কম পাচ্ছি। সে কারণে কাজটা অনেক কঠিন। কিন্তু এখনো আমরা এখানে টিকে আছি এবং লড়াইয়ে আছি।’ এদিকে দীর্ঘ সময় পর আবারও ফাইনালের টিকিট কাটার স্বপ্নে বিভোর থাকা নেদারল্যান্ডস ইংলিশদের কাছে চরম হতাশ। ডাচ কোচ রোনাল্ড কোম্যান বলেন, ‘এই ফলাফলে আমি হতাশ। এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন।’