নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শট খেলছেন তামিম ইকবাল
১৫ বছর আগে সর্বশেষ বাংলাদেশের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ওয়ানডে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। অবশেষে আরেকটি জয় তারা পেয়েছে শনিবার। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৮৬ রানে হারিয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে কিউইরা। বাংলাদেশকে মূলত একাই হারিয়ে দিয়েছেন লেগস্পিনার ইশ সোধি। তিনি ব্যাট হাতেও এদিন শেষদিকে ৩৫ রানের যে কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন তাতে করে বাংলাদেশী বোলারদের শুরুর সাফল্যকে ম্লান করে নিউজিল্যান্ড ৪৯.২ ওভারে ২৫৪ রানে গুটিয়ে যায়। টম ব্লান্ডেল ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন। সেই সোধি পরে একাই ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশী ব্যাটিংয়ে বিপর্যয় ডেকে আনেন।
তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুটি সংগ্রামী ইনিংস বাদে বাকিরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ক্যারিয়ারের প্রথমবার ৫ উইকেট নেওয়া সোধি থেমেছেন ১০ ওভারে ১ মেডেন দিয়ে ৩৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
১৩ বছর আগে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২৩২ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। সেটিই ছিল এতদিন এই ভেন্যুতে তাদের সেরা সংগ্রহ। শনিবার সেই সংগ্রহকে পেছনে ফেলে নিউজিল্যান্ড ৪৯.২ ওভারে গুটিয়ে গেছে ২৫৪ রানে। মিরপুরে নিজেদের সর্বোচ্চ এই সংগ্রহ তারা গড়েছে টম ব্লান্ডেলের ৬৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস এবং টেল এন্ডারদের দারুণ ব্যাটিংয়ে। অবশ্য শুরুতে বাংলাদেশের দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ বেশ ভালোভাবেই শুরু করেন। তারা সেটি ধরে রাখতে পারেননি। ইশ সোধি ক্যারিয়ারসেরা ৩৫ রানের নাটকীয় ইনিংস খেলেন আটে নেমে। ৪৬তম ওভারে তাকে মানকাডিং করেন হাসান মাহমুদ, কিন্তু অধিনায়ক লিটন কুমার দাস আম্পায়ারকে অনুরোধ করে ফিরিয়ে আনেন তাকে। আর এতেই লড়াকু পুঁজি দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। এর সঙ্গে শেষদিকে বাংলাদেশী বোলারদের বোলিং দুর্বলতাই তাদের এই সুযোগ করে দেয়।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে কিউইরা। কিন্তু ২৬ রানেই ২ ওপেনারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন মুস্তাফিজ। সেই ধাক্কাটাকে কাজে লাগিয়ে খালেদ এসে দলীয় ৩৬ রানে আরেকটি উইকেট তুলে নেন। এতে বিপদে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু হেনরি নিকোলস ও ব্লান্ডেল চতুর্থ উইকেটে ৯৫ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেন। নিকোলসকে ২৭তম ওভারে বোলিং করতে এসে সাজঘরে ফিরিয়ে খালেদ ব্রেক থ্রু দেন। নিকোলস ৬১ বলে ৬ চারে ৪৯ রান করেন। তার বিদায়ের পর দ্রুতই রাচিন রবীন্দ্র (১০) ফিরে যান। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে ব্লান্ডেল ভালোভাবেই দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। তাকেও হাসান বোল্ড করে দেন।
ব্লান্ডেল ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিং করে ৬৬ বলে ৬ চার, ১ ছক্কায় ৬৮ রান করেন। এরপর কোল ম্যাকনকি ৩৩ বলে ২ চারে ২০, ইশ সোধি ৩৯ বলে ৩ ছক্কায় ৩৫ ও কাইল জেমিসন ২৮ বলে ৩ চারে ২০ রান করলে আড়াইশ’ পেরিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। অথচ ১৮৭ রানে ৭টি এবং ২১৯ রানে ৮টি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে সফরকারীরা। সেখান থেকে টেল এন্ডাররাই দলকে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডকে সর্বোচ্চ সংগ্রহ পাইয়ে দিয়েছেন। খালেদ ৯.২ ওভারে ১ মেডেনে ৬০ রানে ৩টি এবং অফস্পিনার শেখ মেহেদি হাসান ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। নাসুম আহমেদ ১০ ওভারে মাত্র ৪৪ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। তবে মুস্তাফিজ পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। তিনি ১০ ওভারে ১ মেডেনে ২ উইকেট নিতে পারলেও ৫৩ রান দিয়েছেন।
শেষদিকে বোলারদের ছন্দপতনেই এত ভালো একটি সংগ্রহ পেয়েছে কিউইরা। ৪ বল আগেই তারা অবশ্য ২৫৪ রানে গুটিয়ে গেছে। এটি বাংলাদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আর মিরপুরে এটাই তাদের সেরা। ২০১০ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ড ২৩২ রান করে এই মাঠে। সেটিই এতদিন মিরপুরে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল। এবার নিজেদের সেরা সংগ্রহ পেয়েছে কিউইরা। এর আগে ৬ বার এই ভেন্যুতে আড়াইশ’ রানের টার্গেট পেরিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৫১ আর ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ২৯০ রানের টার্গেট পেরোলেও বাকি ৪ বার পারেনি। এবারও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। কারণ বেশ কয়েকজন এই সিরিজে দীর্ঘ সময় পর ফিরেছেন, যারা নিয়মিত খেলছেন তাদের অধিকাংশই নেই ফর্মে।
সে কারণে শুরুটা বিপর্যয় দিয়েই হয়েছে। প্রথম থেকেই অভিজ্ঞ ট্রেন্ট বোল্ট আর জ্যামিসন দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। তাই রান তুলতে হিমশিম খেয়েছেন তামিম ইকবাল ও লিটন। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ১৯ রানে বিদায় নেন লিটন (৬) জ্যামিসনের পেসে। এরপর অবশ্য দুই তামিমের মধ্যে ভালো জুটি গড়ে ওঠে। দীর্ঘ আড়াই মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাটিং করতে নেমে বেশ স্বচ্ছন্দ্যেই খেলতে থাকেন তামিম। তার সঙ্গে ওয়ানডাউনে নেমে তানজিদ তামিম ৪১ রানের জুটি গড়ে তোলেন। কিন্তু তানজিদ ১২ বলে ৩ চারে ১৬ রান করে ফার্গুসনের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর যেন মড়ক লাগে বাংলাদেশের ইনিংসে। দারুণ সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার চারে নেমে দুই বল খেলেই শুন্য রানে, ফর্মে থাকা তাওহিদ হৃদয় ৪ রানে সাজঘরে ফেরেন সোধির ঘূর্ণিতে।
সোধি যেন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে। এমনকি দুর্দান্ত ব্যাট করা তামিমও ৫৮ বলে ৭ চারে ৪৪ রানে বিদায় নেন তার লেগস্পিনেই। তখন ৫ উইকেটে ৯২ রান নিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। আর দলের বেহাল পরিস্থিতিতে মাহমুদুল্লাহ হাল ধরেন। সাবলীল ভঙ্গিতে ব্যাট চালিয়েছেন তিনি। ৪২ রানের ষষ্ঠ জুটি গড়েন শেখ মেহেদির সঙ্গে। তবে মেহেদি ২৯ বলে ২ চারে ১৭ রানেই বিদায় নেন। মাহমুদুল্লাহ চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেন মাত্র ১৪ রান করতেই। তিনি অর্ধশতকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু সেই মাহমুদুল্লাহও ৭৬ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৯ রানে বিদায় নেন কোল ম্যাকনকির স্পিনে। এরপরই বাংলাদেশের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। নাসুম কিছুটা লড়াই চালিয়ে ব্যবধান কমিয়েছেন। তিনি ৩০ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ২১ রান করেন। বাকিরা তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৫৩ বল আগেই বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৬৮ রানে। এর আগে ক্যারিয়ারে মাত্র ১ বার ৪ উইকেট পাওয়া সোধি এদিন ৩৯ রানে ৬ উইকেট নেন। এ ছাড়া জ্যামিসন নেন ২ উইকেট।
স্কোর ॥ নিউজিল্যান্ড ইনিংস- ২৫৪/১০; ৪৯.২ ওভার (ব্লান্ডেল ৬৮, নিকোলস ৪৯, সোধি ৩৫, জ্যামিসন ২০; শেখ মেহেদি ৩/৪৫, খালেদ ৩/৬০, মুস্তাফিজ ২/৫৩)।
বাংলাদেশ ইনিংস- ১৬৮/১০; ৪১.১ ওভার (মাহমুদুল্লাহ ৪৯, তামিম ৪৪, নাসুম ২১, তানজিদ ১৬; সোধি ৬/৩৯, জ্যামিসন ২/৩২)।
ফল ॥ নিউজিল্যান্ড ৮৬ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা ॥ ইশ সোধি (নিউজিল্যান্ড)।