সময় এখন কাজাখস্তানের টেনিস তারকা এলিনা রিবাকিনার
চলতি মৌসুমের প্রথম শিরোপার দেখা পেলেন এলিনা রিবাকিনা। রবিবার ইন্ডিয়ান ওয়েলসের চ্যাম্পিয়ন হলেন তিনি। টুর্নামেন্টের ফাইনালে কাজাখস্তানের এই তরুণী ৭-৬ (১৩/১১) এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন এরিনা সাবালেঙ্কাকে। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম কোনো ডব্লিউটিএ ১০০০ পর্যায়ের ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন উইম্বলডনের এই চ্যাম্পিয়ন। যা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ শিরোপা। শুধু তাই নয়? ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সাবালেঙ্কাকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে হারের প্রতিশোধটাও দারুণভাবে নিয়ে নিলেন ২৩ বছরের এই তারকা খেলোয়াড়।
সাবালেঙ্কাকে হারিয়ে দারুণ রোমাঞ্ছিত রিবাকিনা। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতিটা বিস্ময়কর! এই শিরোপা জয়ের যাত্রাটা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু এখানে দুটি সপ্তাহ আমার জন্য ছিল দুর্দান্ত। প্রথম সেটে আমাদের উভয়েরই জয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফল আমার পক্ষেই এসেছে। আমি মনে করি, ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে প্রথম সেট জেতাটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম সেট জয় লাভ করায় দ্বিতীয় সেট আমার জন্য সহজ হয়ে যায়।’
গত কয়েক মৌসুম ধরেই বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় অবস্থান করছিলেন এলিনা রিবাকিনা। তবে ২০২২ সালে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। ফাইনালে তিউনিসিয়ার উনস জেবিয়ারকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন কাজাখস্তানের এই তারকা। উইম্বলডনের পর চলতি মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। শিরোপার লড়াইয়ে এরিনা সাবালেঙ্কার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে কোর্ট ছাড়েন তিনি। সেইসঙ্গে বেলারুশ সুন্দরীর সঙ্গে মুখোমুখি চার লড়াইয়ের চারটিতেই হারের স্বাদ পান রিবাকিনা।
কিন্তু ইন্ডিয়ান ওয়েলসে আর সেই সুযোগ দেননি রিবাকিনা। দুর্দান্ত লড়াই করেই বেলারুশ সুন্দরীকে হারিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টের ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন রাশিয়ান বংশোদ্ভূত এই তরুণী। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে তাই দারুণ রোমাঞ্চিত রিবাকিনা। মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দাপুটে পারফর্মেন্স উপহার দেন উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সাবেক চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া কেনিনকে হারিয়ে মিশন শুরু করেন। সেমিফাইনালে বিদায় করে দেন আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইগা সুইয়াটেককে।
শুধু তাই নয়? চলতি বছরে দ্বিতীয়বারের মতো বর্তমান বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর খেলোয়াড় ইগা সুইয়াটেককে হারান রিবাকিনা। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মৌসুমের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে কাজাখস্তানের এই তারকার কাছে হেরেছিলেন সুইয়াটেক। একই বছরে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ইন্ডিয়ান ওয়েলসে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তারকাকে হারানো ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় এখন রিবাকিনা। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন লিন্ডসে ডেভেনপোর্ট। ২০০০ সালে।
২০১৯ সালের পর থেকে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে থাকা খেলোয়াড়কে বেশ কয়েকবার হারানো প্রথম খেলোয়াড়ও এখন এই রাশিয়ান বংশোদ্ভূত রিবাকিনাই। এক দিক থেকে শীর্ষ তারকা। সেইসঙ্গে বর্তমান চ্যাম্পিয়নও। সুইয়াটেককে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটেন। তাই ফাইনালেও ফেভারিটের ট্যাগ গায়ে মাখানো ছিল। শিরোপার লড়াইয়ে ভক্ত-অনুরাগীদের হতাশ করেননি রিবাকিনা। বছরের প্রথম জয়ের পাশাপাশি মধুর প্রতিশোধও নিয়ে নিলেন তিনি। গত জানুয়ারিতে কাজাখস্তানের এই তারকাকে হারিয়েই জীবনের প্রথম কোনো মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিলেন এরিনা সাবালেঙ্কা।
এবার সাবালেঙ্কাকে চলতি বছরের দ্বিতীয় হার উপহার দিলেন রিবাকিনা। চলতি সপ্তাহেই শুরু হবে মিয়ামি ওপেন। সেখানেই অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সাবালেঙ্কা। তিনি বলেন, ‘প্রথম সেটে আমার সামনে অসংখ্য সুযোগ ছিল। কিন্তু সেগুলোর সৎ ব্যবহার করতে পারিনি আমি। এটা আসলে আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এখনো আমার সামনে আরও অনেক কিছুই করার আছে। এমন কিছু দিন আসবে যেখানে সবকিছুই আপনার পক্ষে যাবে না। তাই এখনো আমার কঠোর পরিশ্রম করতে হবে’
এদিকে, ইন্ডিয়ান ওয়েলসের পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সোমবার দানিল মেদভেদেভকে সহজেই ৬-৩ এবং ৬-২ গেমে সরাসরি সেটে পরাজিত করে ইন্ডিয়ান ওয়েলস এটিপি মাস্টার্স ১০০০’র শিরোপা জয় করেন স্প্যানিশ এই টেনিস তারকা। মাত্র ১ ঘণ্টা ১১ মিনিটের লড়াইয়ে তিনি মেদভেদেভকে পরাস্ত করেন। এই শিরোপার মাধ্যমে আবারও বিশ^ র্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান স্থানটি দখল করেন তিনি।
মেদভেদেভের টানা ১৯ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড আলকারাজের সামনে এসে শেষ হলো। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনজয়ী নোভাক জোকোভিচকে হটিয়ে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করলেন আলকারাজ। ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে শিরোপা জিততে পারা ও একইসঙ্গে নাম্বার ওয়ান পজিশন ফিরে পাওয়ার অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। একটি কথাই শুধু বলতে চাই, আমার জন্য এটি একটি দারুণ টুর্নামেন্ট ছিল। অবশ্যই দানিল তার সেরাটা দিতে পারেনি। কিন্তু আমি আমার পারফরমেন্সে দারুণ খুশি।
তবে গত বছরের তুলনায় আমার খেলার ততটা উন্নতি হয়নি।’ গত বছর ফ্ল্যাশিং মিডোতে শিরোপা জয়ের পর বিশে^র সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে এটিপি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন ১৯ বছর বয়সী আলকারাজ। নতুন বছরের শুরুটা খুব ভালো করতে পারেননি। তবে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা উঁচিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় মাস্টার্স ১০০০ শিরোপা জয় করলেন তিনি। টিনএজার হিসেবে অন্তত তিনটি মাস্টার্স শিরোপা জয়ের কৃতিত্বও রাফায়েল নাদালের সঙ্গে স্পর্শ করলেন। বয়স ২০ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত নাদাল জিতেছিলেন ছয়টি মাস্টার্স শিরোপা।