
কোস্টারিকাকে উড়িয়ে দিয়ে উল্লাসে মেতেছেন স্পেনের ফুটবলাররা
স্পেনের একঝাঁক তরুণ তুর্কি শুরুতেই দেখিয়ে দিয়েছেন কতটা ক্ষুধা নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছেন তারা। দেশটির আগামীর তারকারা বুধবার রাতে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে কোস্টারিকাকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে। দোহার আল-থুমামা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে উত্তর আমেরিকার দলটিকে রেকর্ড ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা।
নান্দনিক এই জয়ের পর স্পেন কোচ লুইস এনরিকে পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ জার্মানির উদ্দেশ্যে হুঙ্কার ছেড়েছেন। আল বায়াত স্টেডিয়ামে আগামী রবিবার রাতে হাইভোল্টেজ ম্যাচটি হবে। ম্যাচটি জার্মানদের জন্য বাঁচামরার। কেননা নিজেদের প্রথম ম্যাচে এশিয়ার পরাশক্তি জাপানের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে ইউরোপের পাওয়ার হাউসরা। এবার নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সাত গোলে জয়ের স্বাদ পেয়েছে স্প্যানিশরা। ম্যাচে স্পেনের পুরনো ঐতিহ্য ফুটে উঠে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সালে টিকিটাকা ফুটবল শৈলীর জন্য বিশে^ দারুণ জনপ্রিয় দল হয়ে উঠেছিল স্পেন। এই টিকিটাকা ফুটবল খেলেই বিশ্বরেকর্ড গড়া ট্রেবল জয় করে তারা। অর্থাৎ ২০০৮ ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়।
কোস্টারিকার বিরুদ্ধে সাত গোলের জয় বিশ্বকাপে স্পেনের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। এর আগে ১৯৮৬ সালে ডেনমার্ককে ৫-১ ও ১৯৯৮ সালে বুলগেরিয়াকে ৬-১ গোলে হারিয়েছিল তারা। বিশ্বকাপে ২০১০ সালে পর্তুগালের কাছে ৭-০ গোলে হেরেছিল উত্তর কোরিয়া। গত ১২ বছরে এটিই বিশ্বকাপে কোন বড় ব্যবধানের ফলাফল ছিল। সেই রেকর্ড স্পর্শ করেছে স্প্যানিশরা। অপরদিকে বিশ্বকাপে এটিই সবচেয়ে বড় হার কোস্টারিকার। অথচ এর আগে বিশ্বকাপে খেলা ৮ ম্যাচে তারা হজম করেছিল ৭ গোল। এবার এক ম্যাচেই তারা ৭ গোল হজম করেছে। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসেই এটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের যৌথ রেকর্ড কোস্টারিকার। ১৯৭৫ সালেও তারা ৭-০ গোলে হেরেছিল মেক্সিকোর কাছে।
কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ম্যাচের ১১ মিনিটে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সময় ডানি অলমো স্পেনের হয়ে প্রথম গোল করেন। যা বিশ্বকাপ মঞ্চে স্পেনের ১০০ নম্বর গোল। আর মাত্র পাঁচ দলের বিশ্বকাপে ১০০ বা তারচেয়ে বেশি গোল আছে। দলগুলো হলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্স। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে তরুণ সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পাবলো মার্টিন গাভি গোল করেন। এর ফলে মাত্র ১৮ বছর ১১০ দিন বয়সে গোল করে বিশ্বকাপে স্পেনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হয়েছেন বার্সিলোনায় খেলা এই তরুণ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এখন সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার তালিকায় গাভির অবস্থান তিন নম্বরে। ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে ১৭ বছর ২৩৯ দিন বয়সে গোল করে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার বিশ্বরেকর্ডধারী। দ্বিতীয় স্থানে ১৮ বছর ৯০ দিন বয়সী মেক্সিকোর ম্যানুয়েল রোজাস। বিশ্বকাপ অভিষেকেই বার্সিলোনার হয়ে খেলা ফরোয়ার্ড ফেরান টোরেস জোড়া গোল করেছেন। স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ অভিষেকে এই কীর্তি এর আগে করেছেন সাবেক তারকা ফরোয়ার্ড ডেভিড ভিয়া।
২০০৬ বিশ্বকাপে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই কীর্তি গড়েছিলেন ভিয়া। স্প্যানিশ হিসেবে বিশ্বকাপে এই কীর্তি আছে আর মাত্র একটি। ১৯৩৪ আসরে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ইরারাগোরি ইয়ালো বিশ্বকাপ অভিষেকে জোড়া গোল করেন। কোস্টারিকার বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে স্পেনের খেলোয়াড়রা পরস্পরের মধ্যে ৫৩৭টি সফল পাস সম্পন্ন করেন। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর এটাই কোন দলের প্রথমার্ধে সর্বাধিক পাস করার রেকর্ড। রিয়াল মাদ্রিদে খেলা তারকা ফরোয়ার্ড মার্কো অ্যাসেনসিও ২১ মিনিটে স্পেনের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন। এর ফলে স্পেনের পক্ষে তিনি বিশ্বকাপ মঞ্চে ৫০তম ফুটবলার হিসেবে গোল করার গৌরব অর্জন করেছেন। ম্যাচে গাভি ও পেড্রির বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছে। ১৯ বছর বয়সের মধ্যে কোনো ইউরোপিয়ান দলের একসঙ্গে দু’জনের বিশ্বকাপ ম্যাচে খেলানোর ঘটনা ১৯৬২ সালের পর এটাই প্রথম। সেবার বুলগেরিয়া দুই টিনেজার জেশেভ ও সোকোলভকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধ নামিয়েছিল। ম্যাচে একই রেকর্ড গড়েছে স্পেন ও কোস্টারিকা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে স্পেন গাভিকে ও কোস্টারিকা জুয়িসন বেনেটকে (১৮ বছর ১৬১ দিন) বিশ্বকাপে খেলিয়েছে। রেকর্ডবুক নাড়াচাড়ার পর এখন উজ্জীবিত স্পেন দল। স্বাভাবিকভাবেই দলের খেলায় মুগ্ধ দলটির কোচ লুইস এনরিকে। কোস্টারিকাকে স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এখন জার্মানির অপেক্ষায়। চারবারের শিরোপাজয়ীদের বিরুদ্ধেও একই লক্ষ্য নিতে মাঠে নামার কথা জানিয়েছেন এনরিকে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্পেন কোচ বলেন, ‘যখন এমন কিছু ঘটে, ফুটবল হয়ে ওঠে অসাধারণ এক খেলা। বলে নিয়ন্ত্রণ ও ফিনিশিংয়ে আমরা দুর্দান্ত ছিলাম। বছরের পর বছর ধরে জাতীয় দলে যে দর্শন ছিল।
আক্রমণে আমরা ছিলাম চমৎকার। আমরা যত চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছি, এই জাতীয় দলটিই সবচেয়ে বেশি গোল করেছে। ৩০ গোল করার মতো আমাদের তারকা কোনো খেলোয়াড় নেই। তবে আমাদের আছে টোরেস, ওলমো, অ্যাসেনসিও, গাভি, মোরাতা, ফাতি। গোল করা নিয়ে আমি কখনো চিন্তিত ছিলাম না।’ জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে এনরিকে বলেন, ‘এখন আমাদের অন্য কিছু নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে আমি বলতে পারি এই দল শান্ত থাকার নয়। জার্মানি আমাদের হারাতে পারে। কারণ তাদের শক্তি আছে। কিন্তু আমরা একই খেলা খেলব।’ স্পেনের অবিশ্বাস্য শুরুর পর ফুটবল দুনিয়ায় তাদের নান্দনিক ফুটবলের প্রশংসা চলছে। এই ¯্রােত আসরের শেষ পর্যন্ত টেনে নেয়ার স্বপ্ন তারুণ্যনির্ভর স্পেনের।