ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

আলফাজের কষ্ট !

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯

আলফাজের কষ্ট !

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জন্ম ১৯৭৩ সালে। সিলেটের সন্তান। পরে পুরো বাংলাদেশকেই গর্বিত করেছেন। তার নাম আলফাজ আহমেদ। বাংলাদেশ ফুটবলের সর্বশেষ সুপারস্টার। ৭ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে আবাহনী-মোহামেডানের মধ্যকার খেলায় আলফাজ ফুটবল খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। খেলা ছাড়ার পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোচ হবেন। তখন থেকে এ পর্যন্তু এএফসি ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ লাইসেন্স কোর্স করেছেন চার বছর ধরে। ইচ্ছা আছে কোচ হিসেবে দেশের ফুটবলের সেবা করার। এর আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফুটবল দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিন বছর (২০১৫-২০১৭)। ২০১৪ সালে মোহামেডান মহিলা ফুটবল দলের কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন। সে বছর দলকে লিগে রানার্সআপ করিয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৭ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে (বিসিএল) চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ ছিলেন। দেশীয় স্ট্রাইকারদের গোলমেশিন হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন আলফাজ, যেন তারা জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। শুক্রবার ফেডারেশন কাপ ফুটবলে উত্তর বারিধারার হয়ে কোচ হিসেবে ডাগ আউটে দাঁড়ান আলফাজ। খেলা শেষে আলাপচারিতায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি খেলোয়াড়ী জীবনে যে স্টাইলে খেলতাম, খেলা ছাড়ার পর এখনও দেখিনি এই স্টাইলে কাউকে খেলতে। এজন্য আফেসোস লাগে, একমাত্র জীবন ছাড়া অন্য কোন স্ট্রাইকারকে দেখলাম না যে ক্লাবের মতো জাতীয় দলের হয়েও গোল করতে পারে। প্রতি বছর বিদেশী স্ট্রাইকারদের এনে লিগে খেলানো হয়, ফলে লোকাল স্ট্রাইকাররা মূল একাদশে খেলার সুযোগ পায় না। আমি অনেক আগে থেকেই বলেআসছি এক্ষেত্রে বাফুফের একটা পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমাদের সময় নব্বইয়ের দশকে নিয়ম ছিল প্রতি ম্যাচে অবশ্যই দুজন তরুণ-নতুন খেলোয়াড়কে খেলাতে হবে। এখন সেই আগের নিয়মেই আবারও ফিরে গেলে খুব ভাল হতো। তাহলে অনেক মানসম্পন্ন স্ট্রাইকার বেরিয়ে আসতো। এক্ষেত্রে ক্লাবগুলোরও উচিত লোকাল স্ট্রাইকারদের মূল একাদশে খেলানো।’ আলফাজ আরও যোগ করেন, ‘আমার ভবিষ্যত লক্ষ্য জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করা। দেশকে যদি কোন সাফল্য এনে দিতে পারি, তাহলে আমার খুবই ভাল লাগবে। অনেক গর্বিত অনুভব করবো।’ ১৯৯৬ সালে এশিয়ার প্লেয়ার অব দ্য মান্থ হয়েছিলেন আলফাজ। এরপর আজ পর্যন্ত সেই বিরল কীর্তির পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি আর কোন বাংলাদেশী ফুটবলার। এর কারণ কি? ‘আমি নিজেও ঠিক জানি। আপনারাই ভাল বলতে পারবেন।’ আলফাজের বিব্রত উচ্চারণ। ১৯৯৯ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে এসএ গেমস ফুটবলের ফাইনালে আলফাজের দেয়া একমাত্র গোলেই স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জিতেছিল বাংলাদেশ ফুটবল দল। এবার সেই একই ভেন্যুতে বাংলাদেশ নেপালের কাছে ‘অলিখিত সেমিফাইনাল’-এ হেরে ফাইনালেই উঠতে পারেনি, অর্জন করেছে তাম্রপদক। এটা কতটা কষ্ট দিচ্ছে আলফাজকে? ‘এটা আসলে খুবই কষ্টদায়ক আমার জন্য। কেননা বাংলাদেশ এবার সেখানে গিয়েছিল সবচেয়ে ফেভারিট দল হিসেবেই। অনেক সময় ফেভারিট দলও সাফল্য পায় না। সাফল্য পেতে ভাগ্যও লাগে। আমাদের বেলাতেওই তাই হয়েছে।’ ১৯৮৩ সালে একটি কিশোর ফুটবল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু আলফাজের। পাইওনিয়ার, দ্বিতীয় বিভাগ খেলে ১৯৯১-৯২ সালে রহমতগঞ্জের হয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেন ঢাকার ঘরোয়া ফুটবলে। ১৯৯২ সালেই নাম লেখান দেশের অন্যতম সেরা দল আবাহনীতে। ১৯৯৪ সালে যোগ দেন আরামবাগে। পরের বছরই নাম লেখানে আরেক দেশসেরা ক্লাব মোহামেডানে। ওই বছরই জাতীয় দলে খেলার জন্য ডাক পান। ১৯৯৫-২০০১ সাল পর্যন্ত টানা মোহামেডানে খেলে মুক্তিযোদ্ধায় যোগ দেন আলফাজ। ২০০৩ সালে যোগ দেন ব্রাদার্স ইউনিয়নে। মিডফিল্ডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা আলফাজ তত দিনে দেশসেরা ফরোয়ার্ড। এরপর শেখ রাসেল, বিজেএমসির হয়েও খেলেছেন তিনি। মাঝে আবার খেলেছেন মোহামেডান, আবাহনী ও আরামবাগের হয়ে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের উজ্জ্বল তারকা আলফাজ আহমেদ। ১৯৯৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা জাতীয় দলে নির্ভরতার সঙ্গে খেলা আলফাজ ১৯৯৯ সাফ গেমসের এবং ২০০৩ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন।
×