
ছবি: জনকণ্ঠ
উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শ্রেণি শিক্ষকের অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইভানা তালুকদার বলেন, এ ঘটনার জন্য শ্রেণি শিক্ষক ড. মো. আমিনুর রহমান দায়ী।
এ সময় তিনি বলেন, ওই ছাত্রদের শ্রেণি শিক্ষক ড. মো. আমিনুর রহমানের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাজ্জাদ হোসেন ও ইয়াছিন আরাফাত নামের দুই শিক্ষার্থী গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত এইচএসসি ২০২৫ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
এ বিষয়ে তারা আজ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে আবেদন নিয়ে গিয়েছেন। এর আগেও তারা কয়েক দফা শিক্ষা বোর্ডে গিয়েও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন যাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ সব সময় শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ কল্যাণ ও শিক্ষার সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আজকের এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনার বিষয়ে আপনাদের অবগত করা এবং আমাদের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, আজ আমরা উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সংঘটিত একটি গভীরভাবে উদ্বেগজনক ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এবং এ বিষয়ে গৃহীত জরুরি পদক্ষেপগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
তিনি জানান, অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে এ বছর বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ থেকে সর্বমোট ১৬১৩ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও ফরম পূরণ করা হয়েছে ১৬৯৩ জনের। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে আমি ১৬৯৩ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ হয়েছে—এই তথ্য নিশ্চিত করেছি।
প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, দ্বাদশ শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষক ড. মো. আমিনুর রহমান তাঁর দায়িত্বে ইচ্ছাকৃত অবহেলা ও অনিয়ম করেছেন। তাঁর দায়িত্ব ছিলো শ্রেণির নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম যথাযথভাবে পূরণ ও জমা দেওয়া। তার শাখার সকল শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও উত্তীর্ণ হয় ৮২ জন। কিন্তু ড. মো. আমিনুর রহমান দুইজন উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে অন্য দুইজন ভুল শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করে জমা দেন। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় এটি কোনো প্রক্রিয়াগত ভুল নয়, এটি একটি সুনির্দিষ্ট শিক্ষাগত অসদাচরণ ও নৈতিক লঙ্ঘন।
এক প্রশ্নের জবাবে ইভানা তালুকদার বলেন, আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য গভীরভাবে মর্মাহত। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার এবং সকল স্তরের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আজ দুঃসময়ের মুখোমুখি। আমার সন্তানতুল্য দুই শিক্ষার্থীর যে ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সবাই এতটাই বিস্মিত, হতবাক হয়েছি—যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোনো অধিকার কারো নেই। দায়ী ব্যক্তি অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
দোষীদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি জানান, ইতোমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রেণি শিক্ষক ড. মো. আমিনুর রহমানকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। পাশাপাশি ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তি ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীদের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনা জানামাত্র শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা চালানো হয়েছে।
এছাড়াও অধ্যক্ষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জরুরি আবেদন পেশ করেছে—যেন এই দুই মেধাবী শিক্ষার্থী মানবিক ও ন্যায়সংগত কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য সতর্কমূলক ও প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, এই ঘটনা শিক্ষকের চরম দায়িত্ব অবহেলা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সহকারী অধ্যাপক ও শ্রেণি শিক্ষিকা দিল আফরোজ ডেইজি বলেন, আমাদের দুই সন্তান ইয়াছিন আরাফাত ও সাজ্জাদ হোসেন পরীক্ষা দিতে না পারার জন্য দায়ী শ্রেণি শিক্ষক ড. মো. আমিনুর রহমান। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ড. আমিনুর রহমান ছিলেন ওই ক্লাসের শ্রেণি শিক্ষক। ইভানা তালুকদার হচ্ছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
তাই ওই দুই শিক্ষার্থীর সকল দায়িত্ব ছিলো তাঁর। তিনি আরও বলেন, এ কলেজে রয়েছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার শিক্ষার্থী। একজন অধ্যক্ষের পক্ষে সব শিক্ষার্থীর নাম-রোল মুখস্থ রাখা সম্ভব নয়। আমরা প্রায় ১৫-১৬ জন শ্রেণি শিক্ষক রয়েছি। মর্নিং শিফটে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন, তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক; ডে শিফটে রয়েছেন আরও একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। যেকোনো সমস্যা হলে প্রথমে আমরা তাঁদের সঙ্গে আলাপ করি, সমাধান না হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের শরণাপন্ন হই। একজন শিক্ষকের ভুলের কারণে আজ আমরা জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি।
শহীদ