ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুইসদের হার ৬-১ গোলে

রামোসের হ্যাটট্রিকে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

রামোসের হ্যাটট্রিকে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল

সুইজারল্যান্ডকে ৬ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে পর্তুগাল। দলের পঞ্চম ও নিজের হ্যাটট্রিক গোলের পর গঞ্জালো রামোসের উচ্ছ্বাস

সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে পর্তুগাল। গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচে ফার্নান্দো সান্তোষ ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার পর ক্ষুব্ধ অঙ্গভঙ্গি দেখান তিনি। শঙ্কা সত্যি করে এদিন তাই অধিনায়ক ও বড় তারকাকে বাইরে রেখে শুরুর একাদশ সাজান পর্তুগিজ কোচ।

রোনাল্ডোকে ছাড়াই ছন্দময় ফুটবল উপহার দেয় পর্তুগাল। ১৭ মিনিটেই গোলমুখ খোলেন গঞ্জালো রামোস। ৩৩ মিনিটে ব্যবধান দিগুণ করেন পেপে। দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলে ব্যবধান ৩-০ করেন রামোস। পর্তুগিজদের একতরফা দাপটের ম্যাচে ৫৫ মিনিটে সেটিকে ৪-০ তে রূপ দেন র‌্যাফেল গুয়েরেইরো। এক হালি খাওয়ার পর সুইজারল্যান্ডের সান্ত¦না ৫৮ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান ৪-১এ নামিয়ে আনেন ম্যানুয়েল আকাঞ্জি।

৬৭ মিনিটে আরও একবার প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়ে আসরে প্রথম হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব দেখান ২১ বছরের তরুণ গঞ্জালো রামোস। দল এগিয়ে যায় ৫-১ ব্যবধানে। সুইজারল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়ে এক্সটা টাইমে (৯০+২) ব্যবধান ৬-১ করেন রাফায়েল লিয়াও। সেমিফাইনালের টিকিট পেতে আগামী শনিবার কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর মুখোমুখি হবে পর্তুগাল।
বিশ্বকাপে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথমবারের মতো শুরুর একাদশে নেমে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিলেন গঞ্জালো রামোস। হ্যাটট্রিক করার পাশাপাশি সতীর্থের গোলেও অবদান রাখেন এই তরুণ। দ্বিতীয় পর্তুগিজ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। ১৯৬৬ আসরে কোয়ার্টার-ফাইনালে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন গ্রেট ইউসেবিও।

দারুণ এ জয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল পর্তুগাল। এর আগে সর্বশেষ ২০০৬ সালে রাউন্ড সিক্সটিনের বাধা পেরিয়েছিল তারা। ১৯৬৬ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে পা-রেখে তৃতীয় হওয়াই দলটির সেরা সাফল্য। আসরে প্রথম দুই ম্যাচে একেবারে শেষদিকে রোনালদোর বদলি হিসেবে নামার সুযোগ পান গঞ্জালো রামোস। দলের সেরা তারকার জায়গায় এবার তাকে শুরুর একাদশে রাখেন কোচ।

প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে একাদশে নেমে ১৭ মিনিটের মাথায় জালের দেখা পেলেন বেনফিকার এই ফরোয়ার্ড। গোলটাও কী দুর্দান্ত! বাঁ দিক থেকে জোয়াও ফেলিক্সের বাড়ানো বল ধরে সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সামলে দুরূহ কোন থেকে নেন বুলেট গতির শট, কাছের পোস্ট ঘেঁষে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা। গোলরক্ষক ইয়ান সমেসের যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
৩০তম মিনিটে অন্যপাশে হতে পারত আরেকটি চমৎকার গোল। অনেক দূর থেকে জেরদান শাচিরির দুর্দান্ত ফ্রি কিকে বল রক্ষণ দেওয়ালের ওপর দিয়ে বাঁক খেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া দিয়েগো কস্তার আঙুল ছুঁয়ে যায় বাইরে। এর তিন মিনিট পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করে পর্তুগাল। ফার্নান্দেসের কর্নারে লাফিয়ে উঠে নেওয়া হেডে গোলটি করেন পেপে। নক আউট পর্বে সবচেয়ে বেশি বয়সের খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার অনন্য কীর্তি গড়েছেন এ খেলোয়াড়। 

পর্তুগিজ ডিফেন্ডার এর আগেও একাধিকবার কর্নার থেকে হেডে গোল করেন। ৩৯ বছর বয়সী পেপে নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসে এমন গোলে নিশ্চয়ই উচ্ছ্বসিত। ৪৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়তে পারত আরও। দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে ওয়ান-অন-ওয়ানে শট নেন ২১ বছর বয়সী রামোস। ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক সমের।

বিরতি থেকে ফিরে এসে আবার গোল অভিষিক্ত রামোসের। ম্যাচের ৫১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ডানপ্রান্ত থেকে দিয়াগো ডালোটের ক্রস থেকে পা ছুঁয়ে বল জালে পাঠান রামোস। গোলরক্ষক সোমারের পায়ের নিচ দিয়ে বল খুঁজে পায় ঠিকানা। ৩-০ গোলে এগিয়ে পর্তুগাল।
৫৫ মিনিটে পর্তুগাল চতুর্থ গোলের দেখা পায়। এবার গোল করেন রাফায়েল জুরেরিও। কাউন্টার অ্যাটাকে মধ্যমাঠে বল পান রামোস। দৌড়ে ভেতরে ঢুকে ডি বক্সের ভেতরে রাফায়েলকে বল বাড়ান রামোস। সেখানে ফাঁকায় ছিলেন রাফায়েল। ঠাণ্ডা মাথায় এই লেফট ব্যাক লক্ষ্যভেদ করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের প্রথম গোলের স্বাদ পান। এর তিন মিনিট পরই সুইজারল্যান্ড নিজেদের প্রথম গোল করে।

কর্নার থেকে পাওয়া বলে পা ছুঁইয়ে গোল করেন ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। নিজের অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক রামোসের। ২১ বছর বয়সী এই ফুটবলার ৬৭ মিনিটে নিজের তৃতীয় গোলের দেখা পান। গোল রক্ষক দিয়াগো কস্তার লং পাসে মধ্যমাঠে বল পান বার্নাডো সিলভা। তার বাড়ানো বল ডি বক্সের কাছে পান ফ্লেক্স। ততক্ষণে রামোস বক্সের ভেতরে। ফ্লেক্স তাকে দেখেই বল বাড়িয়ে দেন। বল রিসিভ করে হাওয়ায় ভাসিয়ে রামোসের গোল করতে কোনো সমস্যাই হয়নি। গড়েন কাতার বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিকের ইতিহাস।

সম্পর্কিত বিষয়:

×