ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিধ্বংসী বোলিংয়ে নায়ক স্যাম কুরান

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৩০, ১৪ নভেম্বর ২০২২

বিধ্বংসী বোলিংয়ে নায়ক স্যাম কুরান

ফাইনাল ও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার হাতে ইংল্যান্ডে স্যাম কুরান

পাঁচ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে ফাইনাল খেলতে নামা স্যাম কুরানকে নিয়ে নিশ্চই বিশেষ পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু তাদের কোনো পরিকল্পনাই কাজে লাগেনি। মেলবোর্নে রীতিমতো বিধ্বংসীরূপে আবির্ভূত হলেন ২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার। ৮ উইকেটে মাত্র ১৩৭ রানে থামে পাকিদের ইনিংস। ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে কুরানের শিকার ৩ উইকেট। মোহাম্মদ রিজওয়ান, শান মাসুদ এবং মোহাম্মদ নাওয়াজকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটিংয়ের মেরুদ- ভেঙে দেন তরুণ তুর্কি এ ইংলিশ পেসার।

৫ উইকেটের দারুণ জয়ে ইংলিশদের শিরোপা পুনরুদ্ধারের ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে স্যাম কুরানের হাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টসেরাও হয়েছেন তিনিই।  ৪-০-১২-৩, কুরানের এই বোলিং টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে ফাইনালের তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার। ২০১২ বিশ্বকাপে ১২ রান খরচায় ৪ উইকেট পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান স্পিনার অজন্তা মেন্ডিস। একই ম্যাচে ৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন সুনীল নারিন। এবারের আসরে ৬ ইনিংসে ১১.৩৮ গড়ে কুরানের শিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট। আছে এক ইনিংসে ৫ উইকেটের কীর্তি। ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।  
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল হাতে পেয়ে নিজের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে (১৪ বলে ১৫) বোল্ড করেন কুরান। ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে শান মাসুদকে (২৮ বলে ৩৮) লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে ক্যাচ বানিয়ে পাকিস্তানর বড় রানের আশা কার্যত শেষ করে দেন। ১৯তম ওভারেরর তৃতীয় বলেও সেই একই চিত্র, এবার তার শিকার ৫ রান করা নওয়াজ। টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে ইংল্যান্ডের হয়ে এখন সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট শিকারের রেকর্ড কুরানের।

এর আগে ২০১০ বিশ্বকাপে রায়ান সাইডবটম ও গ্রায়েম সোয়ন এবং ২০১৬ সালে ডেভিড উইলি নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কুরানের আবির্ভাব মূলত সুইং বোলার হিসেবে। আঁটসাঁট লাইন লেংথ থেকে ইনসুইং ও আউট সুইং করিয়ে ইংল্যান্ডকে তিনি টেস্ট জিতিয়েছেন। সেই কুরান এখন ‘টো অ্যান্ড টিথ’ বোলার, যিনি ডেথ ওভারে এসে ব্যাটসম্যানদের পায়ের আঙ্গুল আর দাঁত বরাবর বোলিং করেন।

যে লেংথ থেকে তিনি সুইং করেতেন, সেখান থেকে অফ কাটার করতে দেখা যায়। একই জায়গা থেকে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্তিতে ফেলছে কুরানের নাকল বল। রপ্ত করেছেন চমকে দেওয়া বাউন্সারও। আর দুই ধরনের ইয়র্কারেও তিনি এখন পটু, বিশেষ করে ওয়াইড ইয়র্কারে। আর কুরানের সহজাত বাঁহাতি অ্যাঙ্গেল তো আছেই।
অথচ এক বছর আগেও তিনি টি২০ দলে নিয়মিত ছিলেন না। গত চার বছরে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ডেথ ওভারে সবচেয়ে খরুচে দল ইংল্যান্ডই (১০.২৪)। জোফরা আর্চার সে সমস্যার সমাধান হতে পারতেন। কিন্তু চোট তাকে নিয়মিত হতে দেয়নি। কুরানকেও চোটের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। পিঠের ব্যথার কারণে তার গত টি২০ বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। তবে যখন ফিরেছেন তখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

গত জুলাইয়ে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো কুরানের হাতে ডেথ ওভারের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটা হুট করেই নেওয়া, সেটাও নয়। এবারের দ্য হানড্রেডেও তিনি ওভাল ইনভিন্সিবলের হয়ে ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করেছেন। কুরানের কাউন্টি দল সারের বোলিং কোচ আজহার মাহমুদ বাউন্সারটা আরও শাণিত করতে সাহায্য করেছেন। ইংল্যান্ড আরও একজনকে ধন্যবাদ দিতেই পারে। তিনি হচ্ছেন এমএস ধোনি। চোটে পড়ার আগে আইপিএল দল চেন্নাই সুপার কিংসের ডেথ ওভারের বোলার ছিলেন কুরান।

×