
ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমির গান কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। এই গভীর সুর, যা মানুষের গান থেকে একেবারে আলাদা, তিমিদের জন্য যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম- মিলন, খাদ্য সংকেত বা অভিবাসনের সময় দলবদ্ধ থাকার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নীল তিমি নির্দিষ্ট সময়গুলোতে গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যে মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত দুটি বড় গবেষণায় একই ধরণের প্রবণতা ধরা পড়েছে। প্রথম গবেষণা হয় ২০১৬–২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের দ্বীপপুঞ্জের মাঝের সাগরে। সেখানে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির মেরিন ম্যামাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নীল তিমির খাদ্যসংক্রান্ত ডি-কল এবং প্রজননসংক্রান্ত প্যাটার্নড সং রেকর্ড করেন। হাইড্রোফোন নামের বিশেষ ডিভাইসে ধারাবাহিকভাবে শব্দ রেকর্ড করে দেখা যায়, বসন্ত ও গ্রীষ্মে, যখন তিমিরা সাধারণত মোটা হয় খাদ্যসংক্রান্ত শব্দ কমে যাচ্ছে। এর পরেই প্রজননসংক্রান্ত গানও কমে যায়।
দ্বিতীয় গবেষণা হয় ২০১৫–২০২০ সালের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া কারেন্ট ইকোসিস্টেম এলাকায়। মন্টেরি বে অ্যাকুয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা নীল তিমি, হামব্যাক তিমি ও ফিন তিমির গান বিশ্লেষণ করেন। প্রথম দুই বছরে তিমিদের গান কমে যায়, পরের তিন বছরে আবার বেড়ে ওঠে। পরে আবার কমে যায়, বিশেষ করে নীল তিমির ক্ষেত্রে।
উভয় গবেষণায় একটাই মূল কারণ পাওয়া গেছে খাদ্যের ঘাটতি, বিশেষ করে ক্রিলের অভাব। ক্রিল হলো ছোট চিংড়ির মতো প্রাণী, যা নীল তিমির প্রধান খাদ্য। সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের কারণে ক্রিলের মৃত্যু ঘটে, ফলে তিমিদের জন্য শিকার কঠিন হয়ে যায়।
ক্রিল পাওয়া গেলে নীল তিমি গান গেয়ে অন্যদের সংকেত দেয়। খাবার না থাকলে গান দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। পাশাপাশি তাপপ্রবাহে বিষাক্ত শৈবাল জন্মে, যা সমুদ্রের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নীল তিমির সংখ্যা কম এবং তাদের খাদ্য সংগ্রহের কৌশল হামব্যাক তিমির তুলনায় কম নমনীয়। ফলে খাদ্যের অভাবে তাদের প্রজনন ও গান গাওয়ার প্রবণতা দ্রুত হ্রাস পায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য প্রাণীর ডাক ও সঙ্গীতও বদলে যাচ্ছে। কিছু পাখির গান কিছু এলাকায় একেবারেই হারিয়ে যেতে পারে। নিউইয়র্কের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯০০–১৯৯৯ সালের মধ্যে চার প্রজাতির ব্যাঙ প্রজননের ডাক প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই শুরু করেছে, যা গ্রীষ্মের আগমনের সময় বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই তথ্যগুলো ভবিষ্যতে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ও প্রাণীদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মুমু ২