ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রাচীন প্রযুক্তির বিস্ময়: ২০০০ বছর আগের কম্পিউটার ও ব্যাটারির রহস্য

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৯ আগস্ট ২০২৫

প্রাচীন প্রযুক্তির বিস্ময়: ২০০০ বছর আগের কম্পিউটার ও ব্যাটারির রহস্য

ছবি: সংগৃহীত

আজকের আধুনিক যুগে আমরা ভাবি প্রযুক্তির উন্নতি আমাদের সভ্যতাকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। তবে ইতিহাস ও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ২০০০ বছর আগে এমন কিছু প্রযুক্তি ছিল যা আজকের বিজ্ঞানীদেরও অবাক করে দেয়। কম্পিউটার বা ব্যাটারির কথা কল্পনাও করা যেত না সে সময়, কিন্তু তাতে এখনও আমরা প্রাচীন কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সন্ধান পাই।

মিশরের গিজার পিরামিড নির্মাণ প্রযুক্তি তার অন্যতম এক বিস্ময়। প্রায় ৪৫০০ বছর আগে নির্মিত এই বিশাল পিরামিডে ব্যবহার করা হয়েছিল প্রায় ২৩ লাখ পাথরের ব্লক, যাদের প্রত্যেকটির ওজন প্রায় আড়াই হাজার কেজি। কীভাবে এত ভারী পাথরগুলোকে নিখুঁতভাবে কেটে উপরে তোলা হয়েছিল, তা আজও বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। তারা মনে করেন, কোনো গোপন প্রযুক্তি বা জ্যামিতিক দক্ষতার মাধ্যমে এই নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল।

প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম অবিশ্বাস্য আবিষ্কার হচ্ছে গ্রিসের উপকূলে পাওয়া ‘অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্র’—যা অনেকের মতে পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার। ১৯০১ সালে উদ্ধার হওয়া এই ২০০০ বছরের পুরনো যন্ত্রটি সূর্য, চাঁদ ও গ্রহগুলোর গতিপথ নির্ণয়ের কাজে ব্যবহৃত হতো। আধুনিক এক্সরে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর গিয়ার সিস্টেম ছিল অত্যন্ত জটিল, যা ১৮শ শতকের আগে আর কোথাও দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা এখনও ভাবছেন, কীভাবে এমন জটিল যন্ত্র এত আগে তৈরি হতে পারে।

আরেকটি বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো বাগদাদের প্রাচীন ব্যাটারি। ১৯৩৮ সালে ইরাকে একটি মাটির পাত্র পাওয়া যায়, যার ভেতরে তামা ও লোহা ছিল। গবেষকরা ধারণা করেন, এটি একটি প্রাচীন ব্যাটারি হতে পারে, যা ২০০০ বছর আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হত। যদিও অনেক বিজ্ঞানী এই তত্ত্ব মানতে নারাজ, তবুও এর গঠন আধুনিক ব্যাটারির মতো হওয়ায় এটি গবেষকদের কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

রোমানদের আবিষ্কৃত কংক্রিটও আজকের বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য। আধুনিক কংক্রিট কয়েক দশকেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, কিন্তু রোমানদের তৈরি কংক্রিট ২০০০ বছর পরেও অটুট রয়েছে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত গবেষণায় জানা যায়, তারা ভলকানিক অ্যাশ ও সমুদ্রের পানির সংমিশ্রণে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী কংক্রিট বানাতো। আজকের বিজ্ঞানীরাও এই প্রক্রিয়া অনুকরণ করতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু এখনও সফল হননি।

প্রাচীন ভারতেও অদ্ভুত চিকিৎসা প্রযুক্তি ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সালে সুশ্রুত নামক চিকিৎসক ‘সুশ্রুত সংহিতা’ গ্রন্থে নাক ও চোখের অস্ত্রপ্রচার পদ্ধতির বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারির অনেক পদ্ধতির ভিত্তি এখান থেকেই এসেছে বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা আজও বিশ্বের বহু দেশে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এসব প্রাচীন প্রযুক্তি প্রমাণ করে যে, মানব সভ্যতা শুরু থেকেই অসাধারণ চিন্তাশক্তি ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা নিয়ে গড়ে উঠেছিল। আজকের বিজ্ঞান যতই উন্নত হোক না কেন, এসব প্রাচীন রহস্য এখনও পুরোপুরি উদঘাটিত হয়নি। এই প্রযুক্তিগুলো শুধু অতীতের ইতিহাস নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এক অনুপ্রেরণা।

শেখ ফরিদ 

×