
ছবি: সংগৃহীত
থানায় ছাত্রদলের মব থামাতে পুলিশকে হুমকি নয়, কৌশলগতভাবে একটু বকাঝকা করেছি। পুলিশের হুমকি দেওয়া ভাইরাল ভিডিও এবং তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয়ভাবে বহিষ্কৃত কেশবপুরের জামায়াতের নেতা অ্যাডভোকেট ওজিয়ার রহমান শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে ফেসবুক লাইভে এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।
ফেসবুক লাইভে অ্যাডভোকেট ওজিয়ার রহমান জানান, গত ০৪/০৮/২৫ ইং তারিখে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একটি মামলার বিষয়ে কেশবপুর থানার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে যাই। আমার সঙ্গে ছিলেন ৩নং মজিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি ইব্রাহিম হোসেন এবং বিএনপি নেতা বাগদহা গ্রামের আবু সাঈদ। থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের সাথে আলাপ-আলোচনা শেষে আনুমানিক রাত ৯টার দিকে বেরিয়ে আসার সময় থানার বারান্দায় দেখতে পাই কেশবপুর ছাত্রদলের সভাপতি আজিজুর রহমান তার সঙ্গে থাকা ১৫/২০ জন যুবক, ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্রনেতারা, দুইজন যুবককে আক্রমণ করেছে এবং মারপিট করার জন্য উদ্যত হয়েছে। পরে তাদের নাম জানতে পারি— একজন ফারুক, অপরজন রাজিব। ছাত্রদলের নেতারা বলছিলেন, রাজিব ছাত্রলীগের সদস্য এবং সে নাকি তাদের অনেক অত্যাচার করেছে। ফারুক ৮নং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের যুবজামায়াতের সেক্রেটারি। আমাকে দেখে ওই দুই যুবক তাদের বিপদ থেকে আশ্রয় চায় এবং আমার পেছনে গিয়ে কাকুতি-মিনতি করে, ‘আমাদের একটু বাঁচিয়ে দেন।’
মানবিক কারণে আমি ওই দু’জনকে আমার পেছনে আগলে রেখে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করি, কিন্তু উত্তেজিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিবৃত করা আমার একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ইতিমধ্যে চিৎকারের আওয়াজ শুনে কেশবপুর থানার এসআই মকলেসুর রহমান ঘটনাস্থলে হাজির হন। আমি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মুভমেন্ট ঘোরানোর জন্য কৌশলগত কারণে যুবক দু’জনকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে এসআই মকলেসুর ভাইকে দায়িত্বশীলতার সাথে একটু বকা-ঝকা করি, যাতে ছেলে দু’টিকে উদ্ধার করতে পারি এবং থানা অভ্যন্তরে কোনো প্রকার মব সৃষ্টি না হয়। মকলেসুর ভাইয়ের সহিত একটু বকা-ঝকা, অর্থাৎ একটু উচ্চস্বরে কথা বলার পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শান্ত হয় এবং তারা আমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রকাশ করে যে, ‘ওজিয়ার ভাইয়ের কারণে আজকে তুই বেঁচে গেলি’ এবং বলে, ‘যা, বাড়ি গিয়ে নফল নামাজ পড়।’
তিনি আরও বলেন, আমি দুই যুবকের কাকুতি-মিনতির কারণে মানবিক ও মানবতার খাতিরে মব সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য এসআই মকলেসুর রহমানের প্রতি একটু উত্তেজিত হয়েছিলাম, যা কোনো প্রকার হুমকি নয় বরং তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলার একটি কৌশল মাত্র। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি। আশা করি সকলে প্রকৃত ব্যাপারটি উপলব্ধি করবেন।
উল্লেখ্য, জামায়াতের কেশবপুর উপজেলা পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি আইনজীবী ওজিয়ার রহমান কেশবপুর থানায় ঢুকে তার চাচাতো ভাই শহিদুল ইসলামকে একটি মারামারি মামলায় কেন আসামি করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক মকলেসুর রহমানকে হুমকি দিতে থাকেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায় তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে ধমকাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোক হিসেবে ওই চেয়ারে বসে আপনি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।’ সে সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি কেন রাজনীতি করবো?’
এ ঘটনায় উপপরিদর্শক মকলেসুর রহমান বাদী হয়ে গত ৩ আগস্ট থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ৬ আগস্ট বুধবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। মামলার বাদী মকলেসুর রহমান বলেন, থানায় ঢুকে অনধিকার প্রবেশ করায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সাইমুম তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেন। তিনি বলেন, আইনজীবী ওজিয়ার রহমান উপজেলার লক্ষীনাথঘাটি গ্রামের তার চাচাতো ভাই শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একজন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় কেন তাকে আসামি করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে তাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দেওয়া হয়।
আইনজীবী ওজিয়ার রহমানকে আদালতে তোলা হলে যশোর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর তার পক্ষে আদালতে জামিন শুনানি করেন। কেশবপুর আমলি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনজুমান আরা বেগম ওই দিনই তার জামিন মঞ্জুর করেন।
থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের হুমকি ও হট্টগোল করায় জামায়াতের কেশবপুর উপজেলা পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি ও অ্যাডভোকেট ওজিয়ার রহমানকে ৬ আগস্ট রাতে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া সংগঠনটির সকল পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ৬ আগস্ট বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন।
মুমু ২