
ছবিঃ সংগৃহীত
রাজধানীর বিজয় স্মরণীস্থ কলমিলতা বাজার ও মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প—এই দুটি প্রকল্প ক্ষতিপূরণসহ ফেরত চেয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে “বস্তি পুনর্বাসন ও শহীদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায় সংগ্রাম পরিষদ”-এর ব্যানারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে এই দাবি জানান শহীদ আব্দুল কাদেরের নাতনি অ্যাডভোকেট নুরতাজ আরা ঐশী। এ সময় শহীদ আব্দুল কাদেরের সন্তান আলহাজ মো. আব্দুর রহিম, বস্তিবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে নুরতাজ আরা ঐশী বলেন, “আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হলেও রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস ও অরাজকতায় দুটি প্রকল্প নিয়ে ভুক্তভোগী হয়েছি। একটি হচ্ছে বিজয় স্মরণীর কলমিলতা বাজার এবং অন্যটি মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প। কলমিলতা বাজারটি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, উত্তর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে দখল করা হয়েছে। অপরদিকে, ভাষানটেক প্রকল্পটি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের দ্বারা অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা ন্যায়বিচারের আশায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাইনি। এমনকি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরও সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি। এখন আমরা প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
আলহাজ মো. আব্দুর রহিম বলেন, “বিগত সরকারের সময় বারবার কলমিলতা বাজার ও ভাষানটেক প্রকল্পের সমাধান চেয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ডিসেম্বর মাসে একটি ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি নেই। আজও বস্তিবাসীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু আমলাদের ভাগ্য বদলে গেছে। এই অবস্থায় রাজপথে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। প্রয়োজনে জীবন দেব, তবু পিছু হটবো না।”
দাবির বিস্তারিত:
১. বিজয় স্মরণীস্থ কলমিলতা বাজার
এই বাজারের প্রকৃত মালিক ছিলেন শহীদ আব্দুল কাদের। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হন তাঁর সন্তান আলহাজ মো. আব্দুর রহিম। ১৯৭২ সালে শহীদ হওয়ার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অবৈধভাবে বাজারটি দখল করে। এরপর পরিবারটি ন্যায়বিচারের জন্য সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত লড়াই চালায় এবং আদালত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের দাবি অনুযায়ী, গত ৫৩ বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পাওনা রয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীরা এই ক্ষতিপূরণের একটি অংশ দাবি করেন, যা না দেওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নতুন সরকারের কাছে আবেদন করলেও এখনো ক্ষতিপূরণ মেলেনি।
২. মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প
১৯৯৭ সাল থেকে ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন তারা। এটি ছিল একটি পাইলট প্রকল্প, যা ১৯৯৮ সালে সরকার অনুমোদন দেয় এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত “নর্থ সাউথ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড”-এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়।
কিন্তু ২০১০ সালে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, কর্নেল (অব.) ফারুক খানসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নানা দুর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্প দখল করে নেয়। ওই সময় পরিবারটিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং পরে প্রকল্পটিতে লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
দাবিদার শহীদ পরিবার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বে না। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তারা প্রধান উপদেষ্টার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
মারিয়া