ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মজিবুর রহমান মঞ্জু

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকলে গণরোষের মুখোমুখি হতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৬:৫৪, ৯ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৭:০৫, ৯ আগস্ট ২০২৫

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকলে গণরোষের মুখোমুখি হতে হবে

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়া যে দল বা প্রার্থী ফাউল করবে নির্বাচন কমিশন তাকেই লালকার্ড দেখানোর সক্ষমতা ও সাহস থাকতে হবে, নাহয় নির্বাচন সুষ্ঠু করা কোনোভাবেই সম্ভব হবেনা। ঐকমত‍্য কমিশনে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন ‘একটি দল অনায়াসে ক্ষমতায় চলে আসবে নির্বাচনের আগেই এ ধারণা সৃষ্টি হওয়াটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন‍্য বিপজ্জনক’, এ ধারণা সংশ্লিষ্ট দলের জন‍্য যেমনি ক্ষতিকর তেমনি অন‍্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেও শঙ্কা তৈরি করবে। 

আজ শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে এফডিসি’তে (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র কর্পোরেশন)’ ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত সংসদীয় বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমদ চৌধুরী কিরণ স্পিকার হিসেবে বিতর্ক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিতর্কে "সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চাইতে প্রার্থী ও ভোটারদের ভূমিকাই প্রধান" শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্কে অংশ নেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা কমার্স কলেজের বিতার্কিকগণ। 

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, পতিত আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই গণহত্যা-লুটপাটের সাথে যুক্ত ও গণধিকৃত। তারা নির্বাচনে এলে গণরোষের মুখোমুখি হতে হবে, এতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবেনা। কাজেই তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। 

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধের কোন আশঙ্কা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন। নির্বাচনে অনিয়ম হলে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে না পারলে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নির্বাচনের টোটাল সিস্টেমই করাপ্ট করা হয়েছে। প্রচলিত আসন কেন্দ্রিক ভোট পদ্ধতি দুর্নীতির কারণে ফেল করেছে। আবার পিআর পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য হলেও তাতে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনে মিশ্র পদ্ধতি বেছে নেয়া যায়। আগামীতে সরকারি দল ও বিরোধী দল মিলে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে—এটি ঐকমত্য কমিশনের একটি বড় অর্জন। এতে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে এবং তাদের সক্ষমতা বাড়বে। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা দূর করতে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত আগামী রোজার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। পরাজিত ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী পার্শ্ববর্তী দেশে অফিস খুলে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে করছে। নির্বাচন বানচাল করতে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কেউ কেউ ১/১১ সৃষ্টির বা গৃহযুদ্ধের জুজু’র ভয় দেখাচ্ছে—এটা অমূলক। এজন্য অবশ্যই ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য জরুরি। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে আসতে পারেনি। শীঘ্রই জুলাই সনদে সব দলগুলোর স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। কিন্তু এখনো যে অনৈক্য বিরাজ করছে তাতে আমি শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে শঙ্কিত হচ্ছি। তবে গণতন্ত্র, দেশ ও জাতির স্বার্থে সব পক্ষকে যার যার অবস্থান থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা উচিত। 

তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। এর জন্য নির্বাচন কমিশন, দল, প্রার্থী ও ভোটারদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা আবশ্যক। পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতি বর্জন করে নেতাদের বক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখা উচিত। যাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে কোন বিভেদ তৈরি না হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো যে কাদা ছোড়াছুড়ির অপসংস্কৃতি বিরাজ করছে তা আমাদের ব্যথিত করে। যাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন হয়। যে ভোট প্রদান থেকে দেশের মানুষ ১৫ বছর বঞ্চিত ছিল। সেই ভোট যাতে উৎসবমুখর হয়। প্রত্যেক নাগরিক যাতে নির্বিঘ্নে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে তার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়ে প্রার্থীসহ ভোটারদের ভূমিকাই প্রধান” শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকা কমার্স কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা কালেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন, অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক কাজী জেবেল, সাংবাদিক সাইদুর রহমান ও শিরিনা খাতুন বীথি। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

মিরাজ খান

×