ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

এমআইটির গবেষণা: এআই–এর ব্যবহারে যেভাবে কমে যাচ্ছে স্মৃতিশক্তি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চিন্তাশীলতা

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৪:১৬, ২১ জুলাই ২০২৫

এমআইটির গবেষণা: এআই–এর ব্যবহারে যেভাবে কমে যাচ্ছে স্মৃতিশক্তি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চিন্তাশীলতা

ছবি: প্রতীকী

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই–এর ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে উদ্বেগও। সাম্প্রতিক একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটিসহ বিভিন্ন এআই টুলের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং স্মৃতিশক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

চিন্তা না করে ভরসা এআইয়ের ওপর

লেখালেখি, গবেষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো নিত্যকার কাজে এআইয়ের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। এতে সময় বাঁচলেও মানসিকভাবে সক্রিয় থাকার সুযোগ কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ প্রবণতা মানুষের চিন্তা-শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

এমআইটির গবেষণা কী বলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এক গবেষণায় দেখিয়েছে, এআই ব্যবহারের সময় মানুষের মস্তিষ্কে সক্রিয়তার মাত্রা কমে যায়। ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাম (EEG) প্রযুক্তির মাধ্যমে গবেষকরা দেখেছেন, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীরা যারা রচনা লেখায় এআইয়ের সহায়তা নিয়েছেন, তাঁদের মস্তিষ্কের ‘এক্সিকিউটিভ কন্ট্রোল’ ও মনোযোগের মাত্রা অনেক কম ছিল। অনেকেই এআই–এর লেখা কনটেন্ট হুবহু কপি-পেস্ট করেছেন, যা সৃষ্টিশীলতা ও চিন্তার গভীরতায় বড় ধস নামাচ্ছে।

‘কগনিটিভ ডেবট’—বুদ্ধিবৃত্তিক ঋণ!

গবেষকরা এটিকে বলছেন ‘কগনিটিভ ডেবট’ বা মানসিক ঋণ। ঠিক যেমন অর্থনৈতিক ঋণ ভবিষ্যতের আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে, তেমনি এআইয়ের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ভবিষ্যতে চিন্তাশক্তির দেউলিয়াত্ব ডেকে আনতে পারে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, অনেক ব্যবহারকারীই এখন আর নিজের চিন্তা বা যুক্তি প্রয়োগ করতে আগ্রহী নন। তারা শুধু দ্রুত উত্তর পেতে চায়। এতে একদিকে যেমন সৃজনশীলতা কমছে, অন্যদিকে বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও ঝুঁকিতে পড়ছে।

শিক্ষাক্ষেত্রেও দুশ্চিন্তা বাড়ছে

অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত এআই টুল ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে ‘ডিজিটাল অ্যামনেশিয়া’ বা ডিজিটাল স্মৃতিভ্রংশের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এমনকি, ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের নিজেদের তৈরি অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়বস্তু ঠিকমতো মনে রাখতে পারেনি। শিক্ষকেরা বলছেন, এআই-নির্ভর প্রজন্ম হয়তো ভবিষ্যতের জটিল বাস্তব সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে পারবে না।

সমাধান কোথায়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারই হতে পারে উত্তম পথ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ডিজিটাল লিটারেসি’ বা প্রযুক্তি-সচেতনতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ জরুরি, যেখানে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে কীভাবে এআইকে একটি সহায়ক টুল হিসেবে ব্যবহার করা যায়—বিকল্প নয়।

স্মৃতিশক্তি ও বিশ্লেষণক্ষমতা ধরে রাখতে চর্চার বিকল্প নেই। গণিতে সমস্যা সমাধান, সৃজনশীল লেখালেখি, মেমোরি গেম কিংবা ধাঁধাঁর মতো মানসিক ব্যায়ামগুলো এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে যখন এআই দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন প্রয়োজন প্রযুক্তির সঙ্গে চিন্তাশক্তির সুষ্ঠু সহাবস্থান। নীতিনির্ধারক, শিক্ষক, প্রযুক্তি নির্মাতা—সবার সম্মিলিত উদ্যোগে গড়ে তুলতে হবে এমন একটি ভবিষ্যৎ, যেখানে প্রযুক্তি মানুষকে বদলে না দিয়ে মানুষকে সমৃদ্ধ করবে। কারণ, কল্পনা, বিশ্লেষণ ও সৃষ্টিশীলতা—এই গুণগুলোর ওপরই টিকে আছে মানব সভ্যতা।

 

সূত্র: https://euroweeklynews.com/2025/07/17/ai-use-linked-to-lower-thinking-skills/

রাকিব

×