
ছবি: সংগৃহীত
মঙ্গলগ্রহে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান আলোতে (ভিজিবল লাইট) অরোরা পর্যবেক্ষণ করেছে নাসার পার্সিভিয়ারেন্স রোভার। ২০২৪ সালের ১৮ মার্চ মাসে সূর্য থেকে নির্গত শক্তিশালী কণাগুলো মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে আকাশে একটি মৃদু সবুজ আভা সৃষ্টি করে। এটাই প্রথমবারের মতো কোনো গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে দৃশ্যমান আলোতে অরোরা দেখার ঘটনা।
এর আগেও মঙ্গলে অরবিটিং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অতিবেগুনি (UV) রশ্মিতে অরোরার দেখা মিলেছে। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান রঙে এটি ধরা পড়ে।
এই ঘটনার পূর্বাভাস বিজ্ঞানীরা আগেই পেয়েছিলেন। অরোরা দেখতে তাই প্রস্তুত করা হয়েছিল পার্সিভিয়ারেন্স রোভারকে। রোভারটি দুটি যন্ত্র (সুপারক্যাম স্পেকট্রোমিটার এবং মাস্টক্যাম-জেড ক্যামেরা) দিয়ে দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যে তথ্য সংগ্রহ করে। সুপারক্যাম এর মাধ্যমে সবুজ আলো নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে শনাক্ত করা হয় এবং এবংমাস্টক্যাম-জেড দিয়ে সেই আলোকময় আকাশের ছবি তোলা হয়।
অরোরা তৈরি হয় মূলত শক্তিশালী চার্জযুক্ত কণাগুলো বায়ুমণ্ডলের পরমাণু ও অণুর সঙ্গে সংঘর্ষ করলে। এতে ইলেকট্রন উত্তেজিত হয়ে ফোটন নামে আলোককণার নিঃসরণ ঘটায়। পৃথিবীতে এটি মেরু অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে কারণ আমাদের গ্রহে একটি বৈশ্বিক চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে, যা কণাগুলোকে নির্দিষ্ট অঞ্চলে আকর্ষিত করে। কিন্তু মঙ্গলে এমন কোনো চৌম্বকক্ষেত্র না থাকায় পুরো গ্রহজুড়েই এই কণাগুলো বিস্তার লাভ করে এবং একটি বিস্তৃত অরোরা তৈরি করে।
অরোরার সবুজ রঙের উৎস হচ্ছে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেন ও সৌর কণার মিথস্ক্রিয়া। পৃথিবীতে অরোরা যতটা উজ্জ্বল, মঙ্গলে তা ততটা নয়। ইউনিভার্সিটি অব অসলোর পোস্টডক্টরাল গবেষক এলিস রাইট নিউটসেন জানান, এই অরোরা মানুষের চোখে সরাসরি দেখার মতো উজ্জ্বল ছিল না। তবে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সৌরঝড় হলে তা চোখে দেখা সম্ভব হতে পারে, বিশেষ করে ক্যামেরায় তা আরও স্পষ্ট ধরা দেবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলের পাশাপাশি সৌরজগতের সব গ্রহেই অরোরা দেখা যায়। তবে মঙ্গলের ক্ষেত্রে এটি কখনো নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত হয়, কখনো বা পুরো গ্রহজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এবার যে ধরণের অরোরা দেখা গেছে, সেটি ছিল পুরো গ্রহে বিস্তৃত, এক ধরনের গ্লোবাল ডিফিউজ অরোরা।
নিউটসেন মনে করছেন, ভবিষ্যতে যদি মানুষ মঙ্গলে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বসতি স্থাপন করে, তবে তারা রাতের আকাশে এই অদ্ভুত ও রহস্যময় সবুজ আলো দেখতে পাবে। মঙ্গলের ধুলোবালি কিছু আলোকে আড়াল করলেও উপরের দিকে তাকালে এক বিশাল সবুজ আভায় আকাশ ছেয়ে থাকবে।
সূত্র: এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড
মুমু