
ছবি: সংগৃহীত
রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিস মানেই যে সুস্বাদু খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে, তা কিন্তু নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে যেমন রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর ও বৈচিত্র্যময় খাবার উপভোগ করাও সম্ভব। পুষ্টি সমৃদ্ধ ও নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং জটিলতা কমানো সম্ভব। নিচে পাঁচটি ডায়াবেটিস-বান্ধব খাবার তুলে ধরা হলো, যেগুলো সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর উভয়ই।
১. চর্বিযুক্ত মাছ
স্যালমন, ম্যাকেরেল, সারডিন, হেরিং, অ্যাঙ্কোভি ও ট্রাউট জাতীয় চর্বিযুক্ত মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে জরুরি। এই মাছগুলো প্রোটিনে ভরপুর, যা কার্বোহাইড্রেট শোষণ ধীর করে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক। প্যান-সিয়ার্ড স্যালমন বা স্যালমন সালাদ হতে পারে সুস্বাদু ও উপকারী একটি খাবার।
২. শাকসবজি (বিশেষ করে পাতাযুক্ত সবজি)
পালং শাক, কেল, সুইস চার্ড—এই পাতাযুক্ত সবজিগুলো অল্প ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত, তবে পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন এ, সি, কে এবং ম্যাগনেশিয়াম, যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। আঁশ হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করে। সকালের স্মুদি বা সালাদে পালং শাক বা কেল ব্যবহার করে খাওয়া যেতে পারে।
৩. বেরিজাতীয় ফল
ডায়াবেটিস-বান্ধব ডায়েটও মিষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে, তারই উদাহরণ বেরিজাতীয় ফল যেমন ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি ও রাস্পবেরি। এই ফলগুলোর গ্লাইসেমিক সূচক কম হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় না। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষত অ্যান্থোসায়ানিন, যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বেরিগুলো আঁশসমৃদ্ধ, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ খুবই কম—প্রতি মাঝারি সাইজের অ্যাভোকাডোতে প্রায় ১২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যার মধ্যে ৯ গ্রামই আঁশ। আঁশ হজম হয় না, ফলে এটি রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায় না। অ্যাভোকাডোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, বিশেষত ওলেইক অ্যাসিড, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এই ফ্যাট দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাভোকাডো খাওয়ার সঙ্গে ওজন ও বডি মাস ইনডেক্স (BMI) কম থাকার সম্পর্ক রয়েছে। এটি স্মুদি, সালাদ, স্ন্যাকস কিংবা মাখন বা মেয়োনিজের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়।
৫. ডিম
একটি বড় আকারের ডিমে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ১ গ্রামেরও কম, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার ওপর প্রায় কোনো প্রভাব ফেলে না। ডিম রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায় না বরং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম খাওয়ার ফলে প্রদাহ কমে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে, ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) গঠন পরিবর্তিত হয়। ডিম ভেজে, সালাদে অথবা স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
এই পাঁচটি খাবার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হতে পারে এবং একই সঙ্গে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই বজায় রাখা সম্ভব।
সূত্র: https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/5-best-diabetes-friendly-foods-to-manage-high-blood-sugar/photostory/121201200.cms
এএইচএ