
আমরা যতই ডিজিটাল হই না কেন, মৃত্যুর পর আমাদের রেখে যাওয়া অনলাইন প্রোফাইল, ছবি, ভিডিও, ইমেইল এসব নিয়েই বিপাকে পড়ে পরিবার। কেউ হয়তো আপনার একটা পুরোনো মেসেজ ধরে সারাজীবন আপনাকে মনে রাখতে চাইবে, কিন্তু আপনি ব্যবস্থা না নিলে সেই স্মৃতিগুলো হারিয়ে যেতে পারে চিরতরে।
তাই শুধু জমি-জমা বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নয়, এখন থেকেই ডিজিটাল জীবনও ‘উইল’-এর মতো করে প্রস্তুত রাখা জরুরি। নিচে দেখে নিন, মৃত্যুর পরে আপনার ডিজিটাল তথ্য যেন ঠিকঠাক পৌঁছে যায় প্রিয়জনদের হাতে, তা নিশ্চিত করতে কী করবেন।
Apple অ্যাকাউন্ট থাকলে কী করবেন?
আইফোন ব্যবহারকারীরা ‘Legacy Contact’ নামে একটি অপশন পায়, যেখানে আপনি কারো নাম দিতে পারেন।যে ব্যক্তি আপনি মারা যাওয়ার পর আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকে ছবি, নোটস বা মেসেজ দেখতে পারবে।
এই সুবিধা নিতে হলে আপনার আইফোন বা আইপ্যাডে iOS 15.2 বা তার পরের ভার্সন থাকতে হবে। ম্যাকবুক হলে দরকার macOS Monterey 12.1।
সেটিংসে গিয়ে Sign-in & Security-তে ঢুকুন, তারপর Legacy Contact বেছে নিন। যাকে মনোনীত করবেন, তার অ্যাপল ডিভাইস বা আইডি থাকার দরকার নেই।
তবে আপনার দেয়া ‘অ্যাকসেস কি’ তাকে দিতে হবে,যা আপনি ডিজিটালি পাঠাতে পারেন, অথবা প্রিন্ট করে বা স্ক্রিনশট হিসেবেও রেখে দিতে পারেন।
তবে কিছু বিষয় তিনি দেখবেন না।যেমন, অ্যাপলের DRM প্রোটেক্টেড গান বা সিনেমা, আর পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে রাখা পাসওয়ার্ডগুলো। আর অ্যাকাউন্ট তিনি সর্বোচ্চ তিন বছর ব্যবহার করতে পারবেন, এরপর Apple সেটি ডিলিট করে দেবে।
Google অ্যাকাউন্টের জন্য কী করবেন?
গুগলের ‘Inactive Account Manager’ নামের অপশনটি একটু ভিন্নভাবে কাজ করে। আপনি কবে থেকে অ্যাকাউন্টটি ‘অপ্রস্তুত’ ধরে নেওয়া হবে, তা ঠিক করে দিতে পারবেন।ধরুন ৩ থেকে ১৮ মাস। এরপর গুগল সর্বোচ্চ ১০ জনকে নোটিফাই করবে।
আপনি চাইলে একটি মেসেজ লিখে রাখতে পারেন এবং তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট ডেটা (ইমেইল, ফটো, ইউটিউব ভিডিও ইত্যাদি) শেয়ার করার অনুমতি দিতে পারেন।
আর আপনি চাইলে গুগল আপনার অ্যাকাউন্টটি ৩ মাস পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে ফেলতেও পারবে। সেক্ষেত্রে প্রিয়জনদের সময়মতো ডেটা ডাউনলোড করে রাখতে হবে।
Facebook ও Instagram কীভাবে সাহায্য করে?
মেটা (Facebook ও Instagram-এর মালিক) মৃত্যুর পর আপনার অ্যাকাউন্ট ‘মেমোরিয়ালাইজ’ করে রাখতে পারে—যাতে বন্ধুরা আপনার স্মৃতি ধরে রাখতে পারে। এজন্য প্রিয়জনদের একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হয়।
Facebook ব্যবহারকারীরা আগে থেকেই একজন ‘Legacy Contact’ সেট করে রাখতে পারেন,যিনি মৃত্যুর পর অ্যাকাউন্টটির দেখভাল করবেন। তিনি নতুন ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গ্রহণ বা পিন করা পোস্ট আপডেট করতে পারবেন, তবে পুরোনো পোস্ট মুছতে বা মেসেজ পড়তে পারবেন না। এখানে একজনকেই মনোনীত করা যায়, যাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক।
আপনি চাইলে মৃত্যুর প্রমাণপত্র (যেমন, ডেথ সার্টিফিকেট) দিয়ে অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি মুছে দেওয়ার অনুরোধও জানাতে পারেন।
TikTok ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী করবেন?
টিকটকে মৃত্যুর পর কারো অ্যাকাউন্ট ‘মেমোরিয়ালাইজ’ করার অপশন আছে। এর জন্য Report a Problem > Account and Profile > Manage Account-এ গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে।
অ্যাকাউন্ট মেমোরিয়ালাইজ হলে তাতে “Remembering” লেখা দেখা যাবে এবং কেউ আর লগইন করতে পারবে না, মানে কেউ কিছু পোস্ট বা পরিবর্তনও করতে পারবে না।
X (আগের Twitter)-এ কী হবে?
এখানে আপনি কারো নাম আগেভাগে দিয়ে যেতে পারবেন না। তবে পরিবারের কেউ বা অনুমোদিত কেউ চাইলে অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ করার জন্য অনুরোধ জানাতে পারে।
পাসওয়ার্ডগুলোর কী হবে?
ফেসবুক, গুগল, অ্যাপল ছাড়াও আপনার আরও অনেক ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে—যেগুলোর পাসওয়ার্ড প্রিয়জনদের জানা দরকার হতে পারে।
সব পাসওয়ার্ড যদি খাতায় লিখে রাখেন, তা হারাতে পারে বা কেউ খুঁজে ফেলতে পারে। তার চেয়ে ভালো উপায় হলো একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা, যেমন Keeper, Bitwarden বা NordPass। এখানে আপনি ‘Emergency Access’ সেট করে দিতে পারেন, যাতে জরুরি সময়ে নির্ধারিত ব্যক্তি লগইন করতে পারে।
তবে এর জন্য ওই ব্যক্তিরও একই পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে হবে এবং অনেক সময় সাবস্ক্রিপশন ফি লাগতে পারে।
ডিজিটাল জগতেও আপনাকে মনে রাখার মতো অনেক কিছু থেকে যায়। আপনি আজ একটু সময় বের করে সেটি ঠিকভাবে গুছিয়ে রাখলে, আপনার স্মৃতির কিছু টুকরো একদিন হয়ে উঠবে কারো কাছে অমূল্য।
সূত্র:AP
আফরোজা