ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

নতুন শুরুর প্রত্যাশা

.

প্রকাশিত: ২১:১৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নতুন শুরুর প্রত্যাশা

.

ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক অংশগ্রহণে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে এক নতুন বাংলাদেশের। যে বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত, অন্যায়-অবিচার সকল প্রকার দুর্নীতিমুক্ত। যে বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রাজপথে অকাতরে প্রাণোৎসর্গ করেছেন শিশু-কিশোর, ছাত্র-যুবা, নারী-পুরুষ এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে সামনে রেখে দেশ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতও। বিষয়ে লিখেছেন মানসুরা মুন্নি-

তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ধনশীল খাত হিসেবে বিবেচিত। জাতীয় অর্থনীতিতে বর্তমানে শতাংশের কিছুটা বেশি অবদান রাখছে এই খাত। ১৯৯৭ সালে সফটওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা শিল্পের জাতীয় সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্রতিষ্ঠালগ্নে কেবল ১৭টি সদস্য কোম্পানি থাকলেও বর্তমানে বেসিসের সদস্যসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। শুধু বেসিস নয়, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অপর চারটি জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন বিসিএস, বাক্কো, আইএসপিএবি এবং -ক্যাবের সদস্যসংখ্যাও কয়েক হাজার। এই পাঁচটি সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাখসহ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১০ লাখের অধিক কর্মসংস্থান রয়েছে। বর্তমানে সফটওয়্যার তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতের বার্ষিক অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ, পাশাপাশি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এই খাতে রফতানি আয় হয়েছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার।

এই খাতের উন্নয়ন, উৎকর্ষ ভবিষ্যত সম্ভাবনার উদ্রেকে বেসরকারি খাতের এক বিশাল অবদান রয়েছে। এদেশের বেসরকারি খাতের অংশীদার বিশেষজ্ঞরা বরাবরের মতোই এই খাতের আপামর টেকসই উৎকর্ষময় উন্নয়নের জন্য তৎপর।

এর জন্য পরস্পরের সঙ্গে মিলে এবং সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে তারা কাজ করতে, এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী সদা তৎপর। বেসরকারি খাতের অ্যাসোসিয়েশন, সংগঠন প্রতিষ্ঠানগুলো কারিগরি, বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক বিনিয়োগ দিয়ে এই খাতের প্রকৃত সম্ভাবনা অর্জনে কাজ করতে আগ্রহী। নীতিগত পরিবর্তন নবায়নের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের যেকোনো ধরনের সহায়তা কাজ করতে খাতের সদস্যদের সঙ্গে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতিনিধিদের সংলাপের আহ্বান জানায় তারা।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতার পেছনে দেশের বেসরকারি খাত পরিচালিত সফটওয়্যার তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা খাত বৃহৎ ভূমিকা পালন করেছে, যা দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রা, গভর্ন্যান্স, শিল্পোৎপাদন সেবায় উল্লেখজনক পরিবর্তন এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতই পারে দেশের সব খাতে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ এবং একটি সম্মিলিত, বৈষম্যবিহীন সমাজ গঠনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে।

তারণ্যের শক্তি : বাংলাদেশের ৩৮.৯১ শতাংশ অর্থাৎ কোটি ৪৩ লাখ মানুষের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ বিগত সময়ে তাদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতার দায়ভার সবার। আশার বিষয় হচ্ছে, এই তরুণেরাই এখন পথ দেখিয়ে দিয়েছে। এমন সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতই পারে এই বৃহৎ জনশক্তিকে সর্বাপেক্ষা কাজে লাগাতে। কারণ, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সরাসরি তরুণদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই ইন্ডাস্ট্রিতেই তরুণদের অংশগ্রহণ সবচাইতে বেশি। এই খাতে বর্তমানে আড়াই হাজারের অধিক কোম্পানিতে তিন লাখের অধিক তরুণদের অংশগ্রহণ রয়েছে, যার মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ প্রায় ২০ শতাংশ।

ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং পেশায় জড়িত আছেন প্রায় লাখ তরুণ।  কিছু কৌশলগত উদ্যোগ নিয়ে তরুণদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে।

. দক্ষতা উন্নয়ন: দেশের তরুণদের প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এরপর তাদের প্রযুক্তি দক্ষতায় মানোন্নয়ন করতে হবে।

. স্টার্টআপে উদ্বুদ্ধকরণ: বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে তরুণেরা যাতে উদ্ভাবনীমূলক স্টার্টআপ শুরু করতে পারেন, সেই বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করা উচিত। তারা যাতে তাদের স্টার্টআপকে সফল করতে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে সে জন্য বেসরকারি খাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়ে যথাযথ মেন্টরশিপ দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

. মেধা সংরক্ষণ: তথ্যপ্রযুক্তি খাতই বাংলাদেশের অন্যতম বেশি বেতনের খাত, যেখানে প্রতিবছর ২৫ হাজারের অধিক গ্র্যাজুয়েট যুক্ত হয়। দেশব্যাপী এই খাতের প্রচারণা ক্যারিয়ার সম্ভাবনাকে জনপ্রিয় করার মাধ্যমে মেধাবীদের দেশের বাইরে চলেও যাওয়া রোধ করে তাদেরকে দেশেই রাখা যেতে পারে।

. ফ্রিল্যান্সারদের মানোন্নয়ন: ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের তরুণদের সফলতা ঈর্ষনীয়। তবে বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিং খাতের তুলনায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ খুবই কম।

আন্তর্জাতিক বাজারে আইসিটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হতে পারে, একইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার যে সঙ্কট রয়েছে, সেটি লাঘব করা যেতে পারে। যদি দেশে বর্তমানে সক্রিয় থাকা অন্তত লাখ ফ্রিল্যান্সার মাসে গড়ে ২০০ ডলার আয় করতে পারে, তবে তাদের  মাধ্যমেই  বাড়তি বার্ষিক . বিলিয়ন ডলার দেশে আনা সম্ভব।

 

×