শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। জাতিগতভাবে বাঙালীর আলাদা একটা পরিচয় রয়েছে, যে কারণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ থাকে এতে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এক হয়ে যেতে পারা বাঙালী জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে চারদিকে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। পুজোম-প থেকে শুরু করে সব জায়গায়তেই চলছে উৎসবের প্রস্তুতি।
শরতের নীল আকাশের ফাঁকে সাদা মেঘের আনাগোনা যতই বাড়ছে পুজোর গন্ধমাখা আমেজ ততই মাতিয়ে তুলছে। পুজোর বাজারে সেটিং-শূটিং শেষ। কোন্দিন কোন্ পোশাক পরবে, কোন্ কোন্ ম-পে যাবে তাই নিয়েই এখন তরুণদের ভাবনা-চিন্তা।
উৎসবপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের সুনাম বিশ্বব্যাপী। যে কোন উৎসবে বাঙালী জাতি এক কাতারে এসে দাঁড়ায়। উৎসবের আকাশকে করে তোলে রঙিন। বন্ধুরা এক হয়ে যখন বেরিয়ে পড়ে তখন আর মনে হয় না কে হিন্দু কে মুসলিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুজোম-পকে ঘিরে থাকে সাজ সাজ রব। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত পুরো সময়টাতে নির্বিশেষে সবার অবাধ যাতায়াতে মুখরিত হয়ে থাকে পুজোম-প। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসটাই যেন অন্যরকম। যে কোনকিছুকে সাদরে গ্রহণ করাই যেন এদের রীতি। সেটা যে ধর্মেরই কৃষ্টি কালচার হোক না কেন।
সাধারণত আশ্বিন শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাৎ দশমী অবধি পাঁচ দিন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে আখ্যাত হয়। দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন অর্থাৎ পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বাৎসরিক লক্ষ্মীপুজোর দিন হিসেবে গণ্য হয়। দুর্গাপুজো মূলত পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় তার সমাপ্তি। পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন পরিবারে অবশ্য পনেরো দিন দুর্গোৎসব পালনের প্রথা আছে। এক্ষেত্রে উৎসব মহালয়ার পূর্বপক্ষ অর্থাৎ পিতৃপক্ষের নবম দিন অর্থাৎ কৃষ্ণানবমীতে শুরু হয়ে থাকে।
দুর্গাপুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য কুমারীপুজো। দেবী পুরাণে কুমারীপুজোর সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। শাস্ত্র অনুসারে সাধারণত এক থেকে ষোলো বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পুজোর উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পুজো করার বিধান রয়েছে। এদিন নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। দেবীর মতো সাজিয়ে হাতে দেয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক এবং পায়ে আলতা। সঠিক সময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পুজো করা হয়। চারদিক শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে পুজো অঙ্গন মুখরিত থাকে।
মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যস্ত সময় থাকে। তবে স্কুল-কলেজ কিংবা ভার্সিটিগুলো এ উপলক্ষে ছুটি দিয়ে থাকে। আর এ সুযোগেই উৎসবটিকে সবাই মিলে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত করে। আর তরুণদের এক্ষেত্রে ভূমিকা বেশি। উৎসবের ঢাকের বাদ্য যেন দেশের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে দেয়। প্রতিজ্ঞা নেয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গড়ার।
ছবি : সাজিদ
মডেল : প্রীমা, অবাক, রাজ
তুষার, হৃদয় ও প্লাবন
পোশাক : ফ্যাশন ক্যারিজ