
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অপরিহার্য প্রযুক্তি যদি কিছু থাকে, তাহলে স্মার্টফোন নিঃসন্দেহে তার শীর্ষে। অথচ প্রযুক্তিবিশ্বে জোর গুঞ্জন এখনকার স্মার্টফোন এক প্রকার "উত্তীর্ণ সময়ের ধারক", অর্থাৎ তার সময় ফুরিয়ে এসেছে। আর এই প্রযুক্তিপুনর্বিবেচনার অন্যতম মুখ হয়ে উঠছেন স্বয়ং সেই ব্যক্তি, যিনি একদিন আইফোনকে জন্ম দিয়েছিলেন স্যার জনি আইভ।
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) খাতে অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই, ব্রিটিশ ডিজাইনার স্যার জনি আইভের ডিজাইন হাউজ ‘io’-কে কিনে নিয়েছে ৬.৪ বিলিয়ন ডলারে। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, এই কোম্পানিটি এখনো কোনো পণ্য উৎপাদনই শুরু করেনি। তা সত্ত্বেও এই বিপুল বিনিয়োগ, প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক নতুন জোটের সূচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আইভ, যিনি স্টিভ জবসের সহযোগিতায় আইফোন, আইপ্যাড ও আইপডের মতো যুগান্তকারী ডিভাইস ডিজাইন করেছিলেন, এবার এক সম্পূর্ণ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ওপেনএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি তৈরি করতে যাচ্ছেন এক অজানা, রহস্যময় এআই-নির্ভর ডিভাইস, যেটি নাকি হবে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্দান্ত প্রযুক্তি’।
ডিভাইসটি দেখতে কেমন হবে, কী করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটুকু জানা যাচ্ছে, এর লক্ষ্য একটাই: স্মার্টফোনকে প্রতিস্থাপন করা। অর্থাৎ, এমন একটি যন্ত্র তৈরি করা, যা দিনে-রাতে আমাদের সঙ্গে থাকবে, কিন্তু স্মার্টফোনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেবে।
বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, অল্টম্যান-আইভ জুটির এ প্রচেষ্টা স্টিভ জবস ও জনি আইভের সেই ঐতিহাসিক যুগলবন্দীর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে না। ওপেনএআই কোনোদিনও ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট তৈরি করেনি। অন্যদিকে, আইভ এখন ৫৮ বছরের, যা নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক ধরনের বয়সগত প্রতিবন্ধকতা হিসেবেও বিবেচিত হয়।
তবু ইতিহাস বলছে, এক সময় অ্যাপলও ফোন তৈরিতে নবাগত ছিল। তৎকালীন মোবাইল জগত শাসন করত নোকিয়া ও মটোরোলা, যাদের এখন স্মরণ করাও দায়। আইভ-জবস জুটি সেই বিশাল ঐতিহ্য ভেঙেই তৈরি করেছিলেন নতুন এক যুগ।
আর এখনকার স্মার্টফোন বাজার? গত এক দশকে তার উদ্ভাবনী গতি কার্যত থেমে গেছে। আইফোন ১৪, ১৫ কিংবা স্যামসাংয়ের নতুন মডেল সবই যেন পুরনোর পুনরাবৃত্তি। ক্যামেরা ও ব্যাটারি লাইফে খানিক উন্নতি ছাড়া তেমন কিছুই বদলায় না।
তাছাড়া, বর্তমান ফোন ডিজাইন করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য, এআইর জন্য নয়। আর এআই, ডিজাইনারদের জন্য খুলে দিচ্ছে এক সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত। এখন দরকার এমন একজন, যিনি শুধু ডিজাইনই জানেন না, বরং কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ারও সাহস রাখেন।
স্মার্টফোন ব্যবহারের নেতিবাচক দিকও দিনে দিনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। স্কুলে নিষেধাজ্ঞা, আসক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, ডেটা চুরি এসবই স্মার্টফোনকে এক দুশ্চিন্তার নাম বানিয়ে ফেলেছে। আগামী এক দশকে হয়তো আমরা নিজেরাই বিস্মিত হবো এই ডিভাইসকে এতটা শক্তি দেওয়া কি ঠিক হয়েছিল?
তাই, প্রযুক্তির এই সন্ধিক্ষণে নতুন কিছুর জন্য বাজার প্রস্তুত। হ্যাঁ, অল্টম্যান-আইভ জুটি হয়তো কিছুটা অতিরিক্ত প্রচারণার ফাঁদে পড়েছে। “পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্দান্ত প্রযুক্তি” তৈরি করার ঘোষণা হয়তো অতিশয়োক্তি। কিন্তু চেষ্টাটুকু কি নিঃসন্দেহে মূল্যবান নয়?
স্মার্টফোন একদিন বদলে যাবে এটা নিশ্চিত। আর সেই পরিবর্তনের সূচক কি হবেন সেই মানুষটিই, যিনি একসময় আমাদের হাতে প্রথম স্মার্টফোন তুলে দিয়েছিলেন?
সূত্র:https://tinyurl.com/3zvavauu
আফরোজা