ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

পাঁচ বছরের শিশু মুখস্থ করলো পুরো কোরআন: হৃদয়ে গাঁথা আল্লাহর জীবন্ত মুজিজা

প্রকাশিত: ০২:৫৫, ৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০২:৫৬, ৮ জুলাই ২০২৫

পাঁচ বছরের শিশু মুখস্থ করলো পুরো কোরআন: হৃদয়ে গাঁথা আল্লাহর জীবন্ত মুজিজা

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিপাইনের মোহাম্মদ আব্দুল মুহাইমিন—মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ সম্পন্ন করে তাক লাগিয়েছে বিশ্বকে। ৬,২৩৬টি আয়াত, ১১৪টি সূরা ও প্রায় ৭৮ হাজার শব্দ—সবই তার ছোট্ট হৃদয়ে অক্ষরে অক্ষরে গেঁথে রয়েছে। ভাবা যায়? আর বিস্ময়ের বিষয় হলো, তার মতো হাজার হাজার শিশু প্রতি বছর কোরআন হিফজ করছে সারা বিশ্বে।

এটা কি শুধু স্মৃতিশক্তির ফল? না, শুধু তা-ই নয়। আবার এটাও কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়। বরং এটি মহাগ্রন্থ আল কোরআনের এক জীবন্ত মুজিজা।

এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। ২০১৬ সালে রাশিয়ার দাগিস্তানে হোসেন শেখ আহমেদ নামের এক ১২০ বছর বয়সী বৃদ্ধ, বার্ধক্যের সব সীমা পেরিয়ে, পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক হাফেজ হিসেবে কোরআন মুখস্থ করেন। অন্যদিকে, পাকিস্তানের ১১ বছর বয়সী কিশোরী হানিয়া কাশিফ মাত্র ৩৪ দিনেই হিফজ সম্পন্ন করে।

এই ধারাবাহিকতা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত হাফেজগণ মহান আল্লাহর কালাম তাঁদের বুকে ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন, “ইন্না নাহনু নায্জালনায যিকরা ওয়া ইন্না লাহু লাহাফিজুন”—নিশ্চয়ই আমিই কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।”

এই সংরক্ষণ শুধু কাগজে-কলমে নয়, মানুষের মুখস্থ স্মৃতিতে। এই কারণেই কোরআন পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা কোটি কোটি মানুষ অক্ষরে অক্ষরে মুখস্থ রেখেছে। গবেষণা বলছে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ কোরআন হিফজ সম্পন্ন করে।

বাংলাদেশেও হাফেজের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। আনুমানিক ২৫ লাখের বেশি হাফেজে কোরআন আছেন এই দেশে। কওমি শিক্ষা বোর্ড ‘বেফাক’-এর অধীনে প্রতি বছর প্রায় ১৩,৪০০ জন হাফেজ সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেন। অন্যান্য বোর্ডসহ এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২২,০০০ থেকে ২৫,০০০ জনেরও বেশি।

বিজ্ঞানীদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণত ২০-৩৫ হাজার শব্দ ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু একজন হাফেজের মস্তিষ্ক ধারণ করে প্রায় ৭৮ হাজার শব্দ! প্রতিদিন সালাত ও তেলাওয়াতে এই শব্দগুলো পুনরাবৃত্তি হয়। নিউরোসায়েন্টিস্টদের মতে, কোরআন হিফজ একটি "মেমোরি ম্যারাথন"—যার তুলনা আধুনিক শিক্ষায়ও বিরল।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, “ও লাকদ ইয়াসসারনাল কোরআনা লিয্যিকরি ফাহাল মিমমুদ্দাকির?”—“আমি তো কোরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি, তবে কেউ আছে কি উপদেশ গ্রহণকারী?”

পৃথিবীর ইতিহাসে বহু ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হয়েছে, অথচ কোরআনের একটি শব্দও পরিবর্তন হয়নি। কারণ কোরআন শুধু গ্রন্থ নয়—এটি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে গাঁথা আল্লাহর জীবন্ত মুজিজা। এমনকি যদি পৃথিবীর সব কোরআনের কপি একদিন মুছেও ফেলা হয়, তবুও লক্ষ লক্ষ শিশু অক্ষরে অক্ষরে তা ফিরিয়ে দিতে পারবে।

এটাই আল্লাহ প্রদত্ত এক আশ্চর্য নিয়ামত।

 

শেখ ফরিদ 

×