
ছবি: সংগৃহীত
একটি শিশু যখন মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠতে থাকে, তখন পরিবারের সদস্যদের মনে প্রথম যে প্রশ্নটি জাগে, তা হলো—শিশুটি ছেলে হবে, না মেয়ে? পৃথিবীর আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মানুষের আগ্রহ ও কৌতূহলের যেন শেষ নেই। এক সময় মানুষ ভাবতো, শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ হয় মাতৃকোষ থেকেই। আবার কেউ বিশ্বাস করত বাবা-মা উভয়ের কোষের সম্মিলনে এটি নির্ধারিত হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এমন ভুল ধারণাই প্রচলিত ছিল।
এই ধারনার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে ১৮৮২ সালে, যখন জার্মান জীববিজ্ঞানী ওয়াল্টার ফ্লেমিং ক্রোমোজোম নামের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আবিষ্কার করেন। এই ক্রোমোজোমেই থাকে শিশুর সমস্ত জেনেটিক তথ্য। সে ছেলে হবে না মেয়ে, দেখতে কেমন হবে, বুদ্ধি, উচ্চতা, গায়ের রং—সবই নির্ধারিত হয় ক্রোমোজোমে থাকা জিন দ্বারা। তাই বিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘জীবনের ব্লুপ্রিন্ট’।
ফ্লেমিং কোষের নিউক্লিয়াসে বিশেষ রাসায়নিক প্রয়োগ করে মাইক্রোস্কোপে দেখেন সুতোর মতো গঠন, যা ক্রোমোজোম নামে পরিচিত। তিনি দেখান, মানুষের শরীরে রয়েছে ২৩ জোড়া, মোট ৪৬টি ক্রোমোজোম। এর মধ্যে একটি জোড়া লিঙ্গ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ—এক্স ও ওয়াই ক্রোমোজোম।
পুরুষের ক্ষেত্রে এই দুটি ক্রোমোজোম হলো XY, আর নারীর ক্ষেত্রে XX। ওয়াই ক্রোমোজোমে থাকে পুরুষালী বৈশিষ্ট্য বহনকারী সংকেত, আর এক্স ক্রোমোজোমে থাকে স্ত্রীসুলভ বৈশিষ্ট্য।
লিঙ্গ নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি বিজ্ঞানীরা অঙ্ক দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে—নারীর ডিম্বাণু সবসময়ই X ক্রোমোজোম বহন করে। পুরুষের শুক্রাণু হতে পারে X অথবা Y। যদি শুক্রাণু X হয়, তাহলে শিশুর জিন হবে XX, অর্থাৎ মেয়ে। আর যদি Y হয়, তাহলে XY অর্থাৎ ছেলে। সুতরাং লিঙ্গ নির্ধারণের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুরুষের ওপর নির্ভরশীল, নারীর এখানে কোনো ভূমিকা নেই।
এই বৈজ্ঞানিক সত্যটি আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগেই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আন-নাজিয়াতে বলা হয়েছে—
“এবং তিনি সৃষ্টি করেন যুগল, পুরুষ ও নারী, একবিন্দু বীর্য থেকে যখন তা স্খলিত হয়।”
(সূরা আন-নাজিয়াত, আয়াত ৪৫-৪৬)
অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছে—
“সে কি ছিল না এক ফোটা বীর্য থেকে নিঃসৃত?”
(সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ৩৭)
এই আয়াতগুলোতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এক ফোঁটা বীর্য থেকেই নির্ধারিত হয় পুরুষত্ব বা নারীত্ব। আধুনিক জেনেটিকস ও মলিকুলার বায়োলজির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আজ প্রমাণ করেছেন, এই ‘বীর্য’ মানে পুরুষের শুক্রাণুই লিঙ্গ নির্ধারণে একমাত্র নিয়ামক।
পবিত্র কোরআনে এমন অসংখ্য আয়াত আছে যা আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক আগেই সূক্ষ্ম ভ্রূণতত্ত্ব, জৈব প্রক্রিয়া ও সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। ক্রোমোজোম ও জেনেটিক কোডের মতো জটিল বিষয়গুলোর প্রতি কোরআনের এই ইঙ্গিত আজও গবেষকদের বিস্মিত করে।
আসলে, এই মহাজগত ও জীবনের সূক্ষ্ম পরিকল্পনা যে একজন সর্বজ্ঞ স্রষ্টারই ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছে, বিজ্ঞানের নব আবিষ্কারের আলোকে তা দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এসএফ