
সংগৃহীত
মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্তৃত বদর্সীন এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী যে ভূমি বহু নবী ও রাসুলের স্মৃতি ধারণ করে আছে। এখানেই, এক সময়কার ফেরাউনের রাজপ্রাসাদ এবং ইউসুফ (আ.) এর স্মৃতিবিজড়িত সেই কারাগার অবস্থিত, যা আজও যুগ যুগান্তরের ইতিহাস ও পবিত্রতার প্রতীক হয়ে রয়েছে।
ইতিহাস বলে, হযরত ইউসুফ (আ.) এর কিশোর বয়সেই তাঁর ভাইদের ষড়যন্ত্রে মিশরের সীতাদের এক গভীর কূপে নিক্ষিপ্ত করা হয়। আল্লাহর পরিকল্পনায়, একটি কাফেলা তাঁকে কূপ থেকে উদ্ধার করে। তারপর ১৮ দিরহামে গোলাম হিসেবে বিক্রি করা হয় মিশরের এক উজিরের কাছে। সেই উজীরের বাড়িতে তিনি লালিতপালিত হন এবং নিজের চরিত্রের পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের জন্য পরিচিতি লাভ করেন।
যখন তিনি যৌবনে পদার্পণ করেন, তখন উজীরের স্ত্রী জুলেখা তাঁর প্রতি মোহিত হন। একদিন সুযোগ পেয়ে জুলেখা ঘরের সাতটি দরজা বন্ধ করে তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন। কিন্তু ইউসুফ (আ.) এর চারিত্রিক দৃঢ়তা ও আল্লাহভীতি তাঁকে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে প্ররোচিত করে। তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু জুলেখা পিছন থেকে তাঁর জামা ধরে টান দিলে তা ছিঁড়ে যায়। দরজা খুলতেই উজীরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জুলেখা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়।
পরবর্তীতে, জুলেখার অপবাদের ভিত্তিতে ইউসুফ (আ.) কে কারাগারে বন্দি করা হয়। এই কারাগার, যা "সিজনে ইউসুফ" নামে পরিচিত, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫ মিটার গভীরে অবস্থিত। বলা হয়, এখানেই ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন। সাত বছরেরও বেশি সময় তিনি এই কারাগারে কাটান।
দুর্ভিক্ষের সময়, ইউসুফ (আ.) এর স্বপ্ন ব্যাখ্যার অসাধারণ ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি মিশরের জনগণের জন্য খাদ্য গুদাম তৈরি করেছিলেন। এই গুদামগুলোকে "সাজিনা ইউসুফ" নামে ডাকা হয় এবং তা আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁর পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতায় সেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে মিশরের মানুষ রক্ষা পায়।
ইউসুফ (আ.) ছিলেন একজন মহানবীর সন্তান, সুদর্শন এবং উন্নত চরিত্রের অধিকারী। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনা প্রজ্ঞা, ধৈর্য এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। বসেনের সেই কারাগার, রাজপ্রাসাদ এবং খাদ্য গুদাম কালের সাক্ষী হয়ে আজও পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এই পুণ্যময় স্থানগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সব প্রতিকূলতার পরও সততা ও আল্লাহর ওপর আস্থা কখনো বৃথা যায় না।
এই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে, কষ্টের পরেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সহজতা ও কল্যাণ দান করেন। ইউসুফ (আ.) এর জীবন আমাদের প্রত্যেককে সাহস, সততা এবং আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ভরসার পথ দেখায়।
রাসেল