ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংবাদ সম্মেলনে ড. মোশাররফ

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপি হতাশ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ২৭ মে ২০২৫

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপি হতাশ

গুলশানে মঙ্গলবার বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন  ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপি হতাশ বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এখন সরকারের প্রধান এজেন্ডো হওয়া উচিত নির্বাচন। মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হতাশার কথা জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একইসঙ্গে চলতে পারে। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ২৪ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা চার সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠক করি। ওই বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আরও ২টি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকের বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে প্রেসসচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তার বক্তব্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি।
ড. মোশাররফ বলেন, আমরা কখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করিনি। 
বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনো সময়েই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনো চায় না। তবে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে এসেছি।
ড. মোশাররফ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই শীঘ্রই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ প্রদান করা জরুরি।
লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসীবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যর প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। 
ড. মোশাররফ বলেন, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে অতি শীঘ্র রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা দরকার। 
তিনি আরও বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে। অথচ সরকার আজ পর্যন্ত তার শপথ গ্রহণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করি, কালবিলম্ব না করে সরকার তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে।
ড. মোশাররফ বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। 
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
ড. মোশাররফ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের দিন উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতির কারণে এবং দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব বক্তব্য।
ড. মোশাররফ বলেন, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসীবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারন করে অতি শীঘ্র রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে তরাি                                                                                         ন্বত করা জরুরি। এ লক্ষ্যে আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোন কর্মকান্ডকে আমরা সকল সময়ে নিরুসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করতে অঙ্গিকারাবদ্ধ। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে কোন কোন মহল তাদের ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে মর্মে একটি বিমূর্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
ড. মোশাররফ বলেন, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সকল শ্রেণী পেশার শক্তির মধ্যে যেন বিভেদ সৃষ্টি না হয়, যাতে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা যায় সেজন্য সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসীবাদের পতন ঘটিয়েছে। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
ড. মোশাররফ বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সরকার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

×