
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, “আমি প্রতি রাতেই কোরআন পড়ি। আমার মোবাইলে কোরআনের অ্যাপস আছে। বই নিয়ে আলাদা করে বসতে হয় না, সেখান থেকেই পড়া যায়। আমি কখনো ইংরেজিতে, কখনো বাংলায় পড়ি।”
তিনি বলেন, সমাজে এখন এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সুস্থ বিতর্ক কিংবা ভিন্নমত গ্রহণের পরিবেশ খুবই সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “এখন আমরা এমন অবস্থায় আছি— আমার মতটাই শেষ কথা, না মানলে আমি পুরো বিষয়টাই ছুঁড়ে ফেলে দেব।”
নারী উন্নয়ন ও নারীর অধিকার সম্পর্কিত সংস্কার কমিশনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ছয়-সাতটি সংস্কার কমিশন বহু সুপারিশ দিয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি—প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এ বিষয়ে আলাদা মত থাকলেও কেউই এই কমিশনগুলো বাতিলের দাবি করেনি। কিন্তু নারী সংস্কার কমিশনকে ঘিরে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। কমিশনটি ৪৩৩টি সুপারিশ দিয়েছে। তার অর্ধেকও নয়, মাত্র ২০০টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করলেই নারীদের অবস্থার অনেক উন্নতি সম্ভব।”
ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ব্যাপার হলেও কিছু বিষয়ে তিনি না বলে থাকতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেন রুমিন ফারহানা। “কোরআনে সুদের ব্যাপারে, গীবতের ব্যাপারে, অন্যের ব্যাপারে অযথা নাক গলানো এবং দুর্নীতির ব্যাপারে খুব স্পষ্ট ও কঠোর ভাষায় বলা আছে। কিন্তু এ নিয়ে সমাজে খুব একটা আলোচনাই হয় না। শরিয়া-ভিত্তিক ব্যাংকগুলো ‘মুনাফা’ বলে সুদ নিচ্ছে, যা ফিক্সড হারে প্রতিমাসে দেওয়া হয়—এটা মুনাফা নয়, আমরা সবাই তা জানি। কিন্তু এটিকে কেন্দ্র করে কখনো কোনো অস্থিরতা দেখি না।”
তিনি আরও বলেন, “যাকাতের প্রসঙ্গেও কোরআনে খুব গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। সালাতের পরপরই যাকাতের কথা এসেছে। কিন্তু সমাজে কি আমরা সেই অনুযায়ী আড়াই শতাংশ যাকাত দিচ্ছি? যাকাতের যে ছয়টি নির্ধারিত খাত আছে, তা কি সবাই জানে বা অনুসরণ করে?”
নারী-সম্পর্কিত বিষয়ে সমাজের অসহিষ্ণুতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুমিন বলেন, “নারী বিষয় এলেই সবাই অস্থির হয়ে যায়। অথচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা কি করা যায় না?”
চুরির শাস্তি নিয়ে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “সৌদি আরবে এখনো হাত কেটে দেওয়ার বিধান কার্যকর আছে। তাহলে আমরা কেন কোরআনের নির্দেশনার সবকিছু অনুসরণ না করে কিছু অংশ নিচ্ছি আর কিছু বাদ দিচ্ছি? কোরআনে আল্লাহ বারবার বলেছেন—তোমরা কি কিছু অংশ গ্রহণ করছো আর কিছু অংশ বাদ দিচ্ছ?”
রুমিন ফারহানা বলেন, সমাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ে আলোচনা না হয়ে বরং কিছু নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়েই বেশি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই ধারা থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তিভিত্তিক ও সহনশীল আলোচনা গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=hH5-KWfiEv8