খালেদাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ॥ অভিযোগ ফখরুলের

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ একদফা দাবিতে রাজধানীতে শ্রমজীবী কনভেনশন করেছে বিএনপি। শনিবার বিকেলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির পক্ষে কনভেনশন আয়োজন করে শ্রমিক দল ও সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে
মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। 
ফখরুল বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটজনক, এ জন্য সরকার দায়ী। খালেদা জিয়া যাতে রাজনীতি করতে না পারেন সেজন্যই তাকে মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন। 
ফখরুল বলেন, ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু কথা বলেছেন, যা মিথ্যাচার। কারণ, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই। মামলায় যে টাকা সরানোর কথা তারা বলে দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা সেই টাকা এখন আট কোটির ওপরে ব্যাংকে জমা আছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়া যাতে রাজনীতি করতে না পারেন সে জন্যই তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্রকে নির্যাতনকারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এই রাষ্ট্র পরিবর্তন করতে হবে, এর কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্যই আমরা ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একদফার আন্দোলন করছি। বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে, জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। এ সরকারের পদত্যাগের পর আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো। 
কনভেনশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম খান বলেন, চলমান আন্দোলনে একটা জোরসে ধাক্কা দিলেই বর্তমান সরকারের পতন হবে। তিনি বলেন, এ সরকার নড়বড় করছে। তারা  দেশে-বিদেশে কোথাও কোনো জায়গা পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে শ্রমিক আন্দোলনের একটা গৌরবময় ইতিহাস আছে।  স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আমরা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ গঠন করেছিলাম। এই পরিষদের মাধ্যমে আমরা তখন কিছু যুগান্তকারী দাবি আদায় করতে পেরেছিলাম।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, অনেকে আল্টিমেটাম দিচ্ছে, আমাদের নাকি আর রাস্তায় নামতে দেবেন না। আমরা কিন্তু এখনো আল্টিমেটাম দেইনি। যখন আমরা আল্টিমেটাম দেব তখন পরিস্থিতি কি হবে জানি না। তবে বর্তমান সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। জনগণ ধরলে কেউ রক্ষা পাবেন না।
শ্রমজীবী কনভেনশন আয়োজন কমিটির সমন্বয়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কনভেনশনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের নেতা এএম ফয়েজ হোসেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা শাহ মো. আবু জাফর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস, গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা ফয়জুল হাকিম লালা, জাতীয় শ্রমিক জোটের নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের নেতা আশরাফ আলী আকন্দ প্রমুখ। কনভেনশনে ২০টি শ্রমিক সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এর আগে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আওয়ামী লীগ সরকার উন্মাদ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সরকারি মদদে দেশব্যাপী বেপরোয়াভাবে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের রক্ত ঝরানোর নির্মম খেলা। তারা নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা করে তাদের ঘায়েল করতে চায়। 
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া না দেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে- খসরু ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে হলে জেলে যেতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া না দেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তবে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নিজের হাতে নিয়েছেন তা তাকে তার পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে মামলা ও সাজার প্রতিবাদে ‘৯০-এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।