ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

‘বাংলাদেশ  গণহত্যা স্মরণ ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ সম্মেলনে মুনতাসীর মামুন

স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মার্কিন সহায়তায় রাজনীতি করছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৯, ১ অক্টোবর ২০২৩

স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মার্কিন সহায়তায় রাজনীতি করছে

মুনতাসীর মামুন

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যাবিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেছেন, বাংলাদেশ এক দুর্ভাগা দেশ। যে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এত হত্যা, এত অত্যাচার, এত ধর্ষণ যারা ঘটিয়েছিল, গণতন্ত্রের নামে সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এ দেশে রাজনীতি করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ও প্ররোচনায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশে রাজনীতি করছে। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের গণহত্যার কথা বলতে হবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উদ্যাপন করলেও জেনারেল জিয়া কখনো একাত্তরের পাকবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত ধর্ষণ ও অত্যাচারের কথা বলতে দিত না। পাকিস্তানি বাহিনী না বলে হানাদার বাহিনী বলতে বাধ্য করত।

উদ্দেশ্য ছিল হত্যাযজ্ঞের কথা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা। শনিবার গণহত্যা জাদুঘর ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের আয়োজনে বাংলা একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ গণহত্যা স্মরণ ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ : বহুমাত্রিকতার খোঁজে’ শীর্ষক দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সজল নাগ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ, নিপীড়ন ও আধিপত্যবাদ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার উদাহরণ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম আধুনিক বিশ্বে
জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তাকে চিহ্নিত করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ইউরোপের এক সময়ের ভাষাভিত্তিক দেশ গঠনের চিন্তাধারাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পেতে দেখা যায়। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, পাকিস্তানি রাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় নিপীড়ক রাষ্ট্রের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের বিজয়ের প্রতীক। সেই সময়ে ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাতিরাষ্ট্রের মধ্যে যে জাতিগোষ্ঠীগুলো স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছিল বা যারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছিল, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের উত্থান জাতীয়তাবাদী আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিল।
একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মূল প্রবন্ধ ‘দি সেনসেশন অব বিয়িং আ নেশন : বার্থ অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট অন দি ন্যাশনালিস্ট ডিসকোর্স ইন সাউথ এশিয়া’ পাঠ করেন ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. সজল নাগ। সম্মেলনে মোট তিনটি কর্ম অধিবেশনে ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় ২০ জন গবেষক মুক্তিযুদ্ধ, পণহত্যা ও বাংলাদেশের নানা দিক নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হওয়ার পর গণহত্যা জাদুঘরের নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধন, নতুন প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন এবং জাদুঘরে স্মারক হস্তান্তর করা হয়।
উদ্বোধনী পর্বে আগত ভারতীয় গবেষকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ভারতের কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কবি তারিক সুজাত। এ সময় তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। সঞ্চালনা করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা কেবল বাংলাদেশই নয়, সমগ্র এশিয়ার ইতিহাসে এক যুগ পরিবর্তনকারী ঘটনা। এর কারণ ও প্রভাব কেবল দেশের সীমানার মধ্যে খোঁজার অর্থ হচ্ছে ঘটনার বিশালতাকে সংকীর্ণ করে ফেলা। এশিয়ার নানা অংশে মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল ঘটনা কিভাবে প্রভাব ফেলেছে, সেটা আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যাবে। গণহত্যা আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা সেই লড়াইয়েরই একটি অংশ যা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মত্যাগের কাহিনী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে।
কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অত্যাচারের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশের গবেষকরা গণহত্যার ইতিহাস অন্বেষণকে আন্দোলনে পরিণত করেছেন। 
উদ্বোধনী পর্ব শেষে মোট তিনটি কর্ম অধিবেশনে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম কর্ম অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করেন ভারতের গবেষক ড. সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ, ড. তিস্তা দাস, ড. কিংশুক চ্যাটার্জি, ড. সাগর তরঙ্গ ম-ল এবং বাংলাদেশের গবেষক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের। সভাপতিত্ব করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। দ্বিতীয় কর্ম অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করেন ভারতীয় গবেক ড. অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পুনম মুখার্জী, ড. শম্পা ঘোষ, সুশ্রিতা আচার্যী এবং বাংলাদেশের ড. মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান। তৃতীয় কর্ম অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করেন ভারতীয় গবেষক ড. কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. অনিন্দিতা ঘোষাল, আবদুস সামাদ গায়েন, ড. মো. মাহবুবর রহমান, ড. মো. আহসানুল কবির, মোহাম্মদ ফায়েক-উজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
বিকেলে সমাপনী অধিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলনের ইতি টানা হয়। সমাপনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সমাপনী বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, অনিন্দিতা ঘোষাল, কিংশুক চ্যাটার্জী ও মুর্শিদা বিনতে রহমান। সমাপনী পর্ব শেষে ভারতের পরিচালক কৃষ্ণেন্দু বোস পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘বে অব ব্লাড’ প্রদর্শিত হয়।

×