ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ২৯ জুন ২০২৫

পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা

বিশ্বের অন্যতম দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিদ্যমান ঢাকা মহানগরীতে। বুয়েটের সাবেক এক অধ্যাপকের একটি গবেষণাপত্রে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি দৈনিক ৯১ লিটার পয়োবর্জ্য নিঃসরণ করেন। ঢাকা ওয়াসার আওতাধীন জনসংখ্যা এক কোটি হিসাবে রাজধানীতে দৈনিক ৯১০ মিলিয়ন লিটার পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এবং বাসাবাড়িতে সেপটিক ট্যাংক না থাকায় দৈনিক ৯০০ মিলিয়ন লিটার অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য সরাসরি মিঠাপানির উৎসে চলে যায়। গত ৪০ বছরেও ঢাকায় কোনো পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই পয়োবর্জ্যরে উৎসেই ব্যবস্থাপনা করার প্রসঙ্গটি আসে। এর ফলস্বরূপ রাজধানীর বাসাবাড়িতে বিদ্যমান পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল ২০২২ সালে। পয়োবর্জ্যরে নিষ্কাশন নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করার জন্য একটি পথনকশা (রোডম্যাপ) প্রস্তুত করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর মূল উদ্দেশ্য বাসাবাড়িসহ যেখানে পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হবে, সেখানেই সেপটিক ট্যাংকসহ পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। 
একসময় রাজধানী ঢাকার খাল, পুকুর, জলাশয় ও নদীগুলো প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ও জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ আধার ছিল; কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্প ও পয়োবর্জ্য পরিশোধন না করেই অপসারণের ফলে এসব জলাধার এখন চরম দূষণের শিকার, যা নগরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। থিকথিকে কাদার মতো বর্জ্যে ভরে গেছে গুলশান লেক। দুর্গন্ধে টেকা দায়। লেকের পাশের বাসাবাড়ির মানুষ দরজা-জানালা খুলতে পারেন না। 
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার ৫৯ শতাংশ বাড়ির পয়োবর্জ্য (মল ও প্রস্রাব) সরাসরি নালা, খাল ও জলাধারে ফেলা হচ্ছে। এসব বাড়ি ঢাকা ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন নালার আওতার বাইরে। নিয়ম অনুযায়ী, এমন ভবনের পয়োবর্জ্য সেপটিক ট্যাংকে রেখে পরিশোধনের বিধান রয়েছে যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু তা না করে গোপনে পয়োবর্জ্য ফেলা হচ্ছে করপোরেশনের নালায়। যা পরে খাল হয়ে জলাশয় কিংবা নদীতে গিয়ে মিশছে। ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩-এর আওতাধীন আটটি ওয়ার্ড এলাকার ‘পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা’ নিয়ে চালানো জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ইউনিসেফের সহযোগিতায় প্রায় আড়াই বছর ধরে ২৫ হাজার ৩৮০টি বাড়ি বা ভবনে এ জরিপ চালানো হয়। বাড়িগুলোর অবস্থান ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন, মহাখালী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, বাড্ডা, খিলগাঁও, মালিবাগ, ইস্কাটন ও মধুবাগ এলাকায়।
ইমারত বিধিমালা ও স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী ঢাকায় ভবন নির্মাণ করতে হলে সেখানে অবশ্যই সেপটিক ট্যাংক স্থাপন করে পয়োবর্জ্য পরিশোধন করতে হবে। পয়োবর্জ্য নালা, লেক ও নদীতে সরাসরি ফেলার কোনো সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতি ও তদারকি না থাকা কিংবা বোধগম্য অনৈতিকতার সুযোগে ভবনমালিকরা এ অপরাধ নির্বিচার করে যাচ্ছেন। এখন পরিবেশ দূষণ ও বিধিভঙ্গের জন্য ভবনমালিকদের কি আইনের আওতায় আনা হবে না? ঢাকার পয়োবর্জ্য সরাসরি জলাশয়ে ফেলার প্রবণতা থেকে নগরবাসীর বেরিয়ে আসার জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া বিকল্প নেই।

প্যানেল

×