ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বোমা তৈরির পথে ফের ফিরে যেতে পারে ইরান, সতর্ক করলেন জাতিসংঘ পারমাণবিক পর্যবেক্ষক প্রধান

প্রকাশিত: ২২:০৬, ২৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ২২:০৭, ২৯ জুন ২০২৫

বোমা তৈরির পথে ফের ফিরে যেতে পারে ইরান, সতর্ক করলেন জাতিসংঘ পারমাণবিক পর্যবেক্ষক প্রধান

ইরান আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ শুরু করতে পারে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি (IAEA)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।

গ্রোসি জানান, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হলেও তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। তিনি বলেন, “খোলাখুলি বললে, বলা যাবে না যে সবকিছু মুছে গেছে বা সেখানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।”

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। পরে যুক্তরাষ্ট্রও হামলায় অংশ নেয়, যার লক্ষ্য ছিল ফোর্দো, নাটানজ এবং ইসফাহানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো।তবে এসব হামলার পর ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিয়ে জল্পনা অব্যাহত রয়েছে।

গ্রোসি বলেন, “ইরান চাইলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সেন্ট্রিফিউজগুলো পুনরায় চালু করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে।” তিনি আরও বলেন, “তাদের এখনো শিল্প ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আছে, যা প্রয়োজনে তারা আবার কাজে লাগাতে পারবে।”

গত সপ্তাহেই পেন্টাগনের একটি গোপন প্রাথমিক মূল্যায়ন ফাঁস হয়, যেখানে বলা হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেবল কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে।তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণ ধ্বংস” হয়েছে এবং গণমাধ্যম এটিকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে।

বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি অস্ত্রবিরতি কার্যকর রয়েছে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, প্রয়োজন হলে তিনি আবারও ইরানে বোমা হামলার কথা বিবেচনা করবেন।ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ আব্দুর রাহিম মুসাভি রোববার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে বলেন, “আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি, তবে আমরা আগ্রাসনের জবাব দিয়েছি সর্বশক্তি দিয়ে। অস্ত্রবিরতি মেনে চলা নিয়ে আমাদের গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। যদি আবার হামলা হয়, আমরা শক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত।”

এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বৃহস্পতিবারের এক ভাষণে দাবি করেন, এই হামলাগুলো “তেমন কোনো ফল বয়ে আনেনি।” তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, এই হামলায় “গুরুতর ও অতিরিক্ত ক্ষতি” হয়েছে।

IAEA ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইরানের পার্লামেন্ট পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অভিযোগ করে যে সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ নিচ্ছে।

IAEA মহাপরিচালক গ্রোসি বলেন, “আমাকে বসে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় যেতে হবে। সামরিক হামলার পর একটি দীর্ঘমেয়াদি, কূটনৈতিক সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে।”

২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী ইরান ৩.৬৭ শতাংশের বেশি মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না এবং ফোর্দো প্ল্যান্টে ১৫ বছর পর্যন্ত কোনো সমৃদ্ধিকরণ চালাতে পারবে না। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সেই চুক্তি থেকে সরিয়ে আনেন এবং পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান চুক্তির বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে। ২০২১ সালে তারা ফোর্দো প্ল্যান্টে আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে এবং বর্তমানে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে, যা দিয়ে অন্তত ৯টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব বলে IAEA জানিয়েছে।

পরিস্থিতির গভীরতা বিবেচনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরানকে আবারও কূটনৈতিক পথে ফিরিয়ে আনা এবং মধ্যপ্রাচ্যের নতুন পারমাণবিক উত্তেজনা প্রতিরোধ করা।

 

 


সূত্র:বিবিসি

আফরোজা

×