ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ২১ জুন ২০২৫

বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস

জনসচেতনতা এবং সাগর-মহাসাগরবিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধিতে হাইড্রোগ্রাফির ভূমিকা তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়ে থাকে হাইড্রোগ্রাফি দিবস। আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থার (আইএইচও) সক্রিয় সদস্য হিসেবে বাংলাদেশও প্রতি বছর যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে ২১ জুন দিবসটি পালন করে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- সমুদ্রতলের বিশদ নকশা তৈরি: সমুদ্রের কর্মকাণ্ডকে সক্রিয় করা (‘সিবেড ম্যাপিং: এনাবলিং ওশান অ্যাকশন’)। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বাংলাদেশই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বঙ্গোপসাগরের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। একটি পরিপূর্ণ হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে আরও পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার জন্য হাইড্রোগ্রাফিক পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত ও সমৃদ্ধ করতে সমুদ্র তলদেশের নির্ভুল মানচিত্রায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও টেকসই সমুদ্রনীতি গড়ে তুলতে হবে।
হাইড্রোগ্রাফি হলো সেই বিজ্ঞান যা সমুদ্র, সমুদ্র তলদেশ এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের ভৌত বৈশিষ্ট্যাবলি পরিমাপ করে। তবে এটি শুধু নটিক্যাল চার্ট এবং প্রকাশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমুদ্র ও সমুদ্র বিজ্ঞানের সব শাখা-প্রশাখার সঙ্গে জড়িত। সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, সামুদ্রিক পরিকল্পনা, সুনামি ও জলোচ্ছ্বাস মডেলিং, উপকূলীয় এলাকার ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক পর্যটন এবং সমুদ্রপ্রতিরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে হাইড্রোগ্রাফি বিশেষভাবে জড়িত। ফলে এর যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সমুদ্র জরিপ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কর্মকাণ্ড যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। তাই আধুনিক প্রযুক্তিগুলোকে উপযুক্তভাবে ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে হাইড্রোগ্রাফি সার্ভিসের আধুনিকায়নের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে ফরাসি সরকারের সহযোগিতায়। আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, যা দ্বিতীয় ধাপে ২০০১ সালে সম্পন্ন হয়। ফরাসি সরকারের প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভিস ডিজিটাল জরিপ শুরু করে। চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক স্কুলটি ২০০৫ সাল থেকে ক্যাটাগরি ‘বি’ কোর্স পরিচালনার জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড কমপিটেন্স (আইবিএসসি) দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা হাইড্রোগ্রাফির ওপর আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেয়।
সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জলসীমা নিরাপদ করার জন্য বাংলাদেশের হাইড্রোগ্রাফি সংস্থাসমূহ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং সমুদ্রকে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে দেশের হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থাসমূহ এবং সমুদ্র ব্যবহারকারী সকল সংস্থাসমূহের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস আমাদের নীতিনির্ধারক এবং সমুদ্র গবেষণা তথা সমুদ্র ব্যবহারকারীগণদের মধ্যে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।

প্যানেল

×