
ছবিঃ সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ধরেই নিয়েছিল তাদের পক্ষে এ দেশের মাটিতে সকল অপকর্ম করে পার পেয়ে যাওয়া সম্ভব। কিংবা এ সকল অপরাধের জন্য তাদের কস্মিনকালেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু জুলাই বিপ্লব আ. লীগ ও তাদের দোসরদের এমন সব চিন্তুা-চেতনাকে কল্পনাতীতভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। এদেশের মাটিতেই এখন আ. লীগের সকল অপকর্মের বিচার হচ্ছে। কিন্তু এরপরও কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ভোল পাল্টে সু-কৌশলে পুরোনো অপকর্ম জারি রেখেছে। তেমনি এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে সীতাকুণ্ডে।
২০১১ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা সুপার মার্কেটের ২য় তলার ছাদে বিধিবহির্ভূত ভাবে ৩শ বর্গফুটের ঘর বানিয়ে নেন আওয়ামী লীগ নেতা সেকান্দার হোসাইন। তৎকালীন এমপি ও বিএনপি জামায়াতের অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে হাজারো মামলা দায়েরের মূল হোতা কাসেম মাস্টারের আস্থাভাজন সেকান্দার বহু নিরীহ লোককে নাশকতার মামলায় জড়িয়ে ছিলেন। প্রতিদান হিসেবে সেকান্দারকে হজ্বেও পাঠিয়েছিলেন কাসেম মাস্টার। তার প্রভাব খাটিয়েই পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের সাথে এই ৩শ বর্গফুট ঘরের ভাড়া চুক্তিনামা করিয়ে নেন সেকান্দার। মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৯শ টাকা। কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্পের গম বিক্রয়ের টাকা দিয়ে ঘরটি নির্মাণ করা হয়। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ভাড়া চুক্তিনামা করার পরপর ৩শ বর্গফুটের সাথে লাগিয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৫শ বর্গফুট জায়গা জবরদখল করে আরও একটি ঘর নির্মান করেন সেকান্দার। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে সেকান্দার শুধুমাত্র ৩শ বর্গফুটের ভাড়াই পরিশোধ করেন তাও তিন থেকে চার বছর পর তার খেয়ালখুশি মত সময়ে।
জানা যায়, কাসেম মাস্টারের মৃত্যুর পর একই কায়দায় তার পুত্র আমি-ডামি নির্বাচনের এমপি এস এম আল মামুনের সাথেও সেকান্দারের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এক পর্যায়ে তার অঘোষিত প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করে সেকান্দার। উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন বাণিজ্য করতেন তিনি। এছাড়া এলজিইডির টেন্ডারকৃত প্রকল্পের ঠিকাদাররাও তাকে কমিশন দিতে হত। সীতাকুণ্ড উপজেলার কর্মকর্তাগণ তার ভয়ে তটস্থ থাকতেন কখন কাকে বিপদে ফেলে কিংবা বদলি করিয়ে দেন। তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ২০১৮ সালে সীতাকুণ্ডের তৎকালীন ইউএনও তারিকুল আলমকে চরম রোষানলে পড়তে হয়; ছাড়তে হয় সীতাকুণ্ড।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের জায়গায় জবর দখল করে ঘর নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হননি সেকান্দার। ওই ঘরে মিটারবিহীন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেন তিনি। এরপর সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবকে ওই ঘরটি ভাড়া দেন। নিজেও অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন একটি বৃহৎ অংশ। দশ বছর পর সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাব ঘরটি ছেড়ে দিলে সেখানে লিনাজিস নামে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ভাড়া দেয়া হয়। একই সাথে পূর্বের ন্যায় বৃহৎ অংশটি তার অফিস হিসাবে অদ্যবদি ব্যবহার করছেন। যেখানে এসি সহ অনেক বৈদ্যতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অকপটে এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শনিবার (২১ জুন) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয় বোর্ড (পিডিবি)। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিডিবি বাড়বকুণ্ড নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের প্রকৌশলী আবু ছালেহ ও প্রকৌশলী রিপন। তারা সরেজমিনে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেখতে পান এবং তাৎক্ষণিক সংযোগটি বিচ্ছিন্ করেন।
প্রকৌশলী রিপন এসময় জানান, বাজারের ওপর প্রকাশ্যে এমন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেখে আমরা রীতিমত হতবাক হয়েছি। সাথে সাথে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। একই সাথে প্রায় ২শ ফুট লম্বা সার্ভিস তারটি জব্দ করা হয়েছে। আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে বিদ্যুৎ চুরির অপরাধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এক হিসাবে দেখা যায়, ১৫ বছর মিটারবিহীন অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে সেকান্দার সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন অন্ততঃ তিন লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। আবার জবর দখলকৃত ৫শ বর্গফুট জায়গায় নির্মিত ঘরের নূন্যতম ভাড়া আসে প্রায় দুই লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি অদ্যবদি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন।
সেকান্দারের ভাড়াটিয়া লিনাজিস কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মালিক লিমন ভুঁইয়া বলেন, ঘরটি ভাড়া নেয়ার পর আমি বৈদ্যতিক মিটার স্থাপন করতে চেয়েছি। কিন্তু সেকান্দার আমাকে বলেছেন ঘরটি আমিও অর্ধেক ব্যবহার করি। আপিন মিটার নামালে আমাকেও নামাতে হবে। বরং আপনি আমাকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ মাসিক এক হাজার টাকা করে দিবেন। বাধ্য হয়ে শুরু থেকে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল বাবদ সেকান্দারকে আমি এক হাজার টাকা পরিশোধ করে আসছি।
জবরদখল করে ঘর নির্মাণের বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফখরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইমরান