ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

সরকারি সেবাদানে অনিয়ম

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ২১ জুন ২০২৫

সরকারি সেবাদানে অনিয়ম

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভেতে (সিপিএস) উঠে এসেছে, গত এক বছরে সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন, এমন নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৩২ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজন সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ দিয়ে বা দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সরকারি সেবা নিতে হয়েছে। জরিপের তথ্যানুসারে, সবচেয়ে বেশি ঘুষ-দুর্নীতি হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, গত এক বছরে বিআরটিএতে সেবা নিতে যাওয়া নাগরিকদের ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হন। এই হার আইন প্রয়োগকারীর সংস্থায় ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও ভূমি নিবন্ধন অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। নিরাপত্তার বিষয়টিও এই জরিপে উঠে আসে। জরিপ অনুসারে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম নিরাপদ বোধ করেন। এ ছাড়া গত এক বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমনটি উঠে এসেছে জরিপে।
বাংলাদেশে বর্তমানে দুর্নীতি, অপব্যয় ও অনিয়ম বহুল আলোচিত বিষয়। বেশির ভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন, ব্রিটিশ শাসনের আগে এ দেশে ব্যাপক দুর্নীতি ছিল না। ইংরেজ প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থা দুর্নীতির জন্ম দেয়। যদিও তারা নিজেরা তেমন দুর্নীতিপরায়ণ ছিল না। একসময় ভাবা হতো দেশে সরকারি কর্মচারীরা বেতন কম বলে দুর্নীতিতে জড়ায়। তবে দফায় দফায় বেতন বৃদ্ধিও যে দুর্নীতি রোধে মোক্ষম অস্ত্র নয় তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি কর্মচারীরা সরকারকে প্রতারণা করে কিংবা প্রজাদের হয়রানি করে বড়লোক হয়। তবে শুধু সরকারি কর্মচারীরাই দুর্নীতি করেন এমন নয়। বেসরকারি খাতে কর্মচারীদের মধ্যেও প্রতারণা করা, ভেজাল মেশানো, সিন্ডিকেট গড়ে তোলার মতো দুর্নীতিপরায়ণতা দেখা যায়। সর্বোপরি, যুগে যুগে দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বলয়ে বিশেষত রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্নীতির বিরূপ সুস্পষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশে দুর্নীতি নির্মূল করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। তাই বলে বসে থাকা যায় না। দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দুর্নীতি নির্মূলে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণের সদিচ্ছার পাশাপাশি চাই কঠোর আইনের শাসন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন। প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৎ কর্মকর্তা থাকলে দেশে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়েও দুর্নীতি কমানো প্রায় অসম্ভব। নাগরিকদের করের টাকায় পরিচালিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নাগরিকরা নির্বিঘ্নে সেবা পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে নানা ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সেবা পেতে অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যা অপ্রত্যাশিত। ভবিষ্যতে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে নাগরিকদের সেবা কার্যক্রম হয়রানিমুক্ত হবে, সকলেই স্বস্তিতে নিজেদের প্রাপ্য সেবা গ্রহণ করতে পারবেন- এই প্রত্যাশা।

প্যানেল

×