ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভালো মন মানেই সুন্দর ব্যবহার

রেহানা ফেরদৌসী

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ১১ জুন ২০২৫

ভালো মন মানেই সুন্দর ব্যবহার

প্রতিটি মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে কোনো না কোনোভাবে কারো অধীনে চাকরি করার প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় যিনি ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক অনেক সময় অধীনস্তদের সাথে খারাপ আচরণ করে, বেশি কাজ করিয়ে নিয়ে কম পারিশ্রমিক দেয়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিনা কারণে বেতন দিতে সময় নেয়া বা ঘুরানো ইত্যাদি আজকাল খুব সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
অনেক সময় দেখা যায়, অধীনস্ত কোন কর্মচারী বয়সে অনেক বড় হওয়া সত্ত্বেও তার সাথে তুই সম্বোধন করে কথা বলা হয়। কাজে কোনো ত্রুটি পেলে খারাপ ভাষা প্রয়োগ করে অপমান করা হয়। অথচ সংশোধনের একটু সুযোগ দিলে হয়তো পরবর্তীতে ওই কর্মচারী তা ভালোভাবে সম্পাদন করতে পাড়তো।
 হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলাল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, ‘তারা (অধীনস্তরা) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন। কাজেই আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীনস্ত করে দিয়েছে, তার উচিত, তাকে (অধীনস্তকে) তা-ই খাওয়ানো যা সে নিজে খায় এবং তাকে তা-ই পরিধান করানো যা সে নিজে পরিধান করে। আর তাকে (অধীনস্তকে) এমন কাজের ভার দেবে না, যা তার সাধ্যের বাইরে। যদি কখনো তার ওপর অধিক কাজের দায়িত্ব চাপানো হয় তবে যেন (দায়িত্বশীল ব্যক্তি) তাকে সাহায্য করে।’ (বুখারি ও মুসলিম) হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে প্রিয় নবী (সাঃ) এর আচরণ কেমন ছিল, তা বর্ণনা করে তিনি বলেন-‘আমি রাসুলাল্লাহ্ (সাঃ) এর দীর্ঘ ১০ বছর খেদমত করেছি। তিনি আমার সম্পর্কে কখনো ‘উহ’ শব্দটি বলেননি এবং কোনো দিন বলেননি যে, এটা করো নি কেন? ওটা করো নি কেন? বরং আমার বহু কাজ তিনি নিজে করে দিতেন।’ (মিশকাত)
এছাড়া অধীনস্তদের প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা মালিকের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা বোঝা যায় অর্ধ জাহানের খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর জেরুজালেম ভ্রমণে ভৃত্যের সঙ্গে করা আচরণ থেকে। একজন ভৃত্যকে ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে নিজে হেঁটে গিয়ে যে দৃষ্টান্ত হজরত ওমর (রা.) স্থাপন করেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাসুল (সা) দাস-দাসী ও অধীনস্তদের মন মানসিকতা বুঝে তাদের মন জয় করে নিতেন। যেভাবে কথা বললে তারা খুশি হবে তাদের সাথে সেভাবে কথা বলতেন। এটাই ইসলামের আদর্শ।
পৃথিবীতে সবাই ধনী নয়। আবার সবাই অন্যের অধীনস্ত নয়। সৃষ্টিকর্তা মানুষের মাঝে এত বৈচিত্র্য দান করেছেন। বাহ্যত ধনী-গরিবের মাঝে সম্পদের পার্থক্য দেখা গেলেও একে-অপরের মুখাপেক্ষী। কেউ নিজে নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ইসলাম সমাজের-উঁচু-নিচু, জাতপাতের ভেদাভেদ, বৈষম্য কখনোই প্রশ্রয় দেয় না।
অনেক সময় দেখা যায়, বাসার কাজের ছেলেমেয়েদের অতিরিক্ত কাজ করানো হয়। অল্প বেতন দিয়ে পুরো পরিবারটিকেই গুছিয়ে রাখে তারা। একটু ভুল হলেই শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত করে। কাজের সময় তাদের হাত দিয়ে সামান্য কিছু নষ্ট হলে শুরু হয় নির্যাতন। রাসুল (সা.) ক্রীতদাসদের কষ্ট নিজে ভাগ করে নিতেন। বিপদ-আপদে তাদের পাশে দাঁড়াতেন। কোনো ক্রীতদাসের অসুস্থতার খবর শুনলে নবীজি ছুটে যেতেন এবং তার সেবা-শুশ্রুষা করতেন। তার শেষ জীবন পর্যন্ত দাস-দাসীদের কথা স্মরণ রেখেছিলেন।
শুধু নিজের অধিনস্তদের সাথে সদ্ব্যবহার নয়,সমাজে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের প্রতিও আমাদের সদাচরণ করা উচিত। সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষায় অনেক কর্মী রয়েছেন।তারা বন্ধুর ন্যায় আমাদের সহযোগিতা করেন। তারা হাত পেতে কখনই চাইবে না। কিন্তু সুন্দর একটি সালাম বা ছোট একটি হাসি উপহার স্বরূপ দিলে তাদের যে ভুবন ভোলানো হাসি আপনি পাবেন তা আপনার সে মুহূর্তেকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যথেষ্ট! অনেকের টাকা না থাকলেও আত্মসম্মান বোধটা আছে। তারা কখনোই আপনার নিকট কিছু চাইবে না। তবে ভালোবেসে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে তা ফিরিয়েও দেবে না ॥
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। বাংলার মধ্যযুগের বিখ্যাত কবি বড়ু চণ্ডীদাস উচ্চারণ করেছিলেন মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী। ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ুক সকলের মাঝে!
 লেখক : শিক্ষার্থী

প্যানেল

×