ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হাত ভরা ফুল চোখ ভরা স্বপ্ন

নাদিয়া আফরোজ

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১০ জুন ২০২৫

হাত ভরা ফুল চোখ ভরা স্বপ্ন

কৃষ্ণচূড়া থরে থরে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শহরের বুকে। কখনো এক মুঠো স্বপ্ন নিয়ে অথবা বিদ্রোহের ডাক নিয়ে। যে শিশু মুক্ত আকাশে পাখির ন্যায় উড়ে বেড়াবে, খেলাধুলা করবে, চোখে স্বপ্ন আঁকবে, সেই শিশুদের নগরের যান্ত্রিকতা জীবনকে ঘিরে ধরেছে। কখনো বুঝে আবার কখনো শৈশবের আবেগের তাড়নায় হয়ে সেই যান্ত্রিকতাকে উপেক্ষা করে হেসে দুলে দোল খায়। অথচ ওরা জানে না ওরা নিজেরাই ফুল, ওরা দেশ ও জাতির স্বপ্ন। সবুজে ঘেরা বিস্তীর্ণ শহরের ক্লান্তি পথ শিশুদের ছুঁতে পারে না। স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি এই মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিটি শিশুর পাওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবতা বলে সেখানে বিশাল এক ফাঁক হয়ে গেছে। প্রকৃতির সঙ্গে শিশুর এক সরল ও আন্তরিক বন্ধনের মুহূর্তটি যেন শুধু প্রাধান্য পায়। পথের পাঁচালি উপন্যাসের ‘অপু’ চরিত্রটির মতো প্রকৃতির সঙ্গে এক নিবিড় সম্পর্ক পৃথিবীর সব শিশুর। ফুলের মতো তাজা প্রাণ, হাসি যেন তাদের সতেজ রাখে। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি অভিযোগ, অভাব, ক্লান্তি কোমল হৃদয়ের অধিকারী শিশুদের কিছুতেই টলাতে পারে না। লালঝুড়ি, লালপাপড়ি চোখে- মুখে যেন এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি।
আমাদের শহরের নানা প্রান্তে প্রতিদিনই শত শত শিশু এমনভাবেই দিন কাটায় কারও হাতে বই, কারও হাতে কাজ, আবার কারও হাতে শুধুই সময়। এই পথ শিশুগুলো হয়তো স্কুলে যায় না, কিংবা যেতে পারে না। হয়তো মা-বাবার পক্ষে তাদের জন্য তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তবুও তারা জীবনের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেয়, নিজস্ব উপায়ে, নিজের শর্তে। উন্নয়ন কেবল রাস্তাঘাট বা বিলবোর্ডে সীমাবদ্ধ থাকলে শিশুরা পিছিয়ে পড়ে। তারা হয়ে ওঠে এমন এক প্রজন্ম, যারা স্বপ্ন দেখে কিন্তু পৌঁছাতে পারে না। আমরা যারা শহরের কেন্দ্রে বসে উন্নয়নের গল্প বলি, তারা অনেক সময় ভুলে যাই শহরের প্রান্তরে এমন অনেক শিশুর গল্প প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে, যাদের কেউ জানে না। অথচ তাদের প্রতিটি দিনই একেকটি সংগ্রাম, একেকটি প্রতীক্ষা একদিন ভালো কিছু হবে এই আশায়। তারা যে জীবনের পাঠ নেয়, তা কোনো পাঠ্যপুস্তকে শেখানো হয় না। সেটা শেখায় বাস্তবতা, দারিদ্র্য, অবহেলা আর শিকড়ের টান।
এ রকম হাজারও শিশু পাপড়ি কুড়ায়, সেটা হয়তো বিক্রি করবে, বা কারও জন্য উপহার বানাবে, অথবা নিছকই খেলনার মতো জমানোর আনন্দে করে। কিন্তু তাদের সেই কাজটি আমাদের অনেক ‘ব্যস্ত’ মানুষের চেয়ে অনেক গভীর। কারণ তারা প্রকৃতিকে উপলব্ধি করছে, তারা নিজের মতো করে শৈশবকে সাজানোর চেষ্টা করছে। শিশুরা যেন তাদের শৈশব ফিরে পায়, যেন তারা প্রকৃতির পাপড়ির চেয়ে বেশি কিছু কুড়াতে পারে ‘আশা, ভালোবাসা, নিরাপত্তা, সুযোগ’ এ বিষয়টি সমাজ ও রাষ্ট্রের সবার মনোযোগের দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।

শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্যানেল

×