
প্রতিবছর ৩১ মে পালিত হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শনিবার পালিত হয়েছে দিবসটি। এ দিবস পালনের প্রধান লক্ষ্য, বিশ্বজুড়ে ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা ধরে তামাক সেবনের সব প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে মানুষকে উৎসাহিত করা। তদুপরি মানুষকে তামাক ব্যবহারে এককভাবে নিরুৎসাহিতকরণ এবং স্বাস্থ্যের ওপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করানো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালের ৩১ মে চালু করে দিবসটি। এবারে দিনটির প্রতিপাদ্য ‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি/তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।’ এই আহ্বান অবশ্যই সময়োপযোগী। এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় তামাক। বাংলাদেশেও প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মূল্যবান জীবন কেড়ে নেয় ধূমপান। ধূমপানজনিত নানা রোগে দেশে প্রতিবছর স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ মৃত্যুহারও বাড়ছে। এরপরও ধূমপানের প্রধান কারণ তামাক ও তামাকজাত নানা পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রবণতাও বাড়ছে। তামাকজাত পণ্য তথা সিগারেট-বিড়ি ইত্যাদি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মোহনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে তরুণ প্রজন্মের মুখে তুলে দিচ্ছে তামাকজাত পণ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে ১৩-১৫ বছর বয়সী অন্তত ৩ কোটি ৭০ লাখ কিশোর-কিশোরী তামাক ব্যবহার করে, যা থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। এ অবস্থায় কাঁচামাল তামাক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ওপর কঠোর নির্দেশনা আবশ্যক বলে দাবি করেছে সামাজিক সংগঠনগুলো। আশার কথা এই যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ এর সংশোধন ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তাতেও হুমকি সৃষ্টি করছে তামাক। সিগারেটের প্যাকেটে ‘ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ’, ‘ধূমপানে স্ট্রোক হয়’, ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ ইত্যাদি সতর্ক বার্তা থাকা সত্ত্বেও আশঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে যত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, অন্য কোনো রোগ-ব্যাধির কারণে তত ঘটে না। তামাকজাত দ্রব্য সেবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ। ধূমপান সংক্রান্ত আইন অনুসারে জনসমাগম আছে এমন জায়গা বা গণপরিবহনে কোনো ব্যক্তি ধূমপান করতে পারবেন না। যদি কেউ এটি করে, তাহলে তাকে অনধিক তিনশ’ টাকা অর্থদণ্ড দিতে হবে। যদি ওই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা একাধিকবার একই কাজ করেন, তাহলে পর্যায়ক্রমে এই দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন। আইনের এ ধারা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কেননা, প্রকাশ্যে ধূমপান করলেও কোনো পক্ষ থেকে কাউকে জরিমানা করতে দেখা যায় না। তাই প্রকাশ্যে ধূমপানকারীদের মধ্যে আইনের তোয়াক্কা না করার প্রবণতাও তৈরি হয়েছে। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সর্বস্তরের মানুষকে।
প্যানেল