ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতের পুশ ইন

প্রকাশিত: ১৮:০২, ১০ মে ২০২৫

ভারতের পুশ ইন

বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সঙ্গে ভারতের এবং তিনটি জেলার সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গাসহ অন্তত ১৬৭ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন) ভারত। এ মুহূর্তে এমন আরও শতাধিক ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানা গেছে কূটনৈতিক সূত্রে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লোকজনকে ঠেলে দেওয়ার (পুশ ইন) ক্ষেত্রে ভারতের কর্মকাণ্ড যথাযথ চ্যানেলে পরিচালিত হয়নি। তিনি এটিকে একটি অন্যায্য পদ্ধতি বলে অভিহিত করেছেন।
দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে এমন তৎপরতায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পুশ ইনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক বার্তা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত থেকে কূটনৈতিক এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একাধিক স্থানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ৪-৭ মে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা দিয়ে ভারত থেকে ১৬৭ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৩ জনকে খাগড়াছড়ি, ৪৬ জনকে কুড়িগ্রাম, ২৩ জনকে সিলেট, ১৫ জনকে মৌলভীবাজার, ১০ জনকে চুয়াডাঙ্গায় পুশ ইন করা হয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো সীমান্তে ভারত পুশ ইন করছে। প্রতিবেশী দেশের কাছে এমন অগ্রহণযোগ্য আচরণ প্রত্যাশিত নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে অতীতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত থেকে এভাবে কয়েক দিনে এত পুশ ইনের নজির সাম্প্রতিক নেই। তা ছাড়া আগে পুশ ইন করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুশ ব্যাক (ফেরত পাঠানো) করা হতো। কিন্তু এবার এখনো পুশ ব্যাক করা হচ্ছে না।
অবিলম্বে পুশ ইন বন্ধ করা চাই। এ বিষয়ে সরকারকে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। এর আগেও বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা করেছে ভারত। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে লালমনিরহাট সীমান্তে দুইশ’র বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা করেছিল ভারত। কিন্তু ঢাকার অনমনীয় অবস্থানের কারণে সীমান্তের শূন্যরেখায় তাদের থাকতে হয়েছিল প্রায় দুই মাস। তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। দিল্লির সঙ্গে আলোচনার ঠিক আগেই দেখা যায়, সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রায় দুই মাস ধরে থাকা লোকজন আর নেই।
সর্বশেষ মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ শতাধিক মানুষকে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তাদের মধ্যে বড়লেখা থেকে গত বুধবার ৩২ জন এবং বৃহস্পতিবার ২৩ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বুধবার সকালে কমলগঞ্জ থেকে আটক করা হয় ১৫ জনকে। ভারত গায়ের জোরে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে জানিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার যেন কোনো দুর্বলতা না দেখায়, তাও বলেছেন তিনি। বিএসএফের পুশ ইনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, এ ধরনের অপচেষ্টাকে বাংলাদেশে সফল হতে দেওয়া যাবে না। এই দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।
পুশ ইনের মতো ভারতীয় অপতৎপরতার বিষয়ে অবহেলা করার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বিধিমালা অনুযায়ী কোনো দেশ অপর দেশের নাগরিককে সেই দেশে ফেরত পাঠাতে চাইলে তথ্য-প্রমাণসহ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় হস্তান্তরের উদ্যোগ নিতে পারে। এর ব্যতিক্রম বেআইনি। তাই ভারতের উচিত হবে এখনি পুশ ইন বন্ধ করা।

প্যানেল

×