ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনা

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ২১:১৭, ৭ মে ২০২৩

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনা

.

সৃজন আঙিনায় সার্বক্ষণিক সদর্পে বিচরণ করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মননশীলতার ভান্ডারও পরিপূর্ণ। সৃষ্টির আনন্দে জীবন, প্রকৃতি আর অদৃশ্য নিয়ন্তাকে সম্মোহন চিত্তে অনুধাবনই ছিল চিরস্থায়ী শিল্পদ্যোতনা। যেখানে নিরন্তর নান্দনিক সৌধ নির্মাণও কবির আজন্মের সাধনা। তেমনি বাস্তবের প্রেক্ষাপটে সুচিন্তিত ভাবনার বলয়ও ছিল নিত্য সক্রিয় এবং গতিশীল।

কল্পনা আর স্বপ্নাবিষ্ট আবেশে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন সৃজন-দ্যোতনার অনুবর্তী হয়ে। আবার ঠান্ডা মাথায়, ধীর, স্থির চিত্তে প্রতিদিনের জীবন হয়ে উঠেছে কঠিন বাস্তবের টানাপোড়েনে। নির্মোহ আবেগে সত্যের অপলাপের কোনো সুযোগই সেখানে ছিল না। সুদক্ষ নির্মাণ শিল্পীর ভূমিকায় কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখেছেন অবলীলায়, অনন্য মহিমায়। পাশাপাশি চিন্তা ভাবনার জগৎও ছিল অবারিত এবং নিরন্তর। কবির মনন শৌর্যের শুরুটাও আবাল্য থেকে শেষ অবধি যা জীবন সায়াহ্ন পর্যন্ত কবিকে সজাগ-সচেতনে বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করায়। সেখানে বিরাট অংশজুড়ে ছিল মাতৃভূমি, মাতৃভাষা, প্রচলিত শিক্ষা প্রণালীর ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়াও বিশ্ব পরিসরের জ্ঞানচর্চাকে সমধিক গুরুত্ব দেওয়া। নিজের ভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে আলোকিত করতে লেখনী শক্তি বরাবরই ছিল অবিচল। কবির জবানিতে আছে- জীবনের প্রথম প্রবন্ধই লিখেছেন বিজ্ঞানের ওপর এবং তা বাংলায়। ১৭ বছরের কিশোর রবীন্দ্রনাথের ইউরোপ যাত্রায় যে বিশ্বভ্রমণের সূচনা সেটাও জীবনভর উদ্দীপ্ত চেতনায় কবিকে আলোড়িত করেছে। সঙ্গত কারণে ভ্রমণ কাহিনীও লিপিবদ্ধ করেছেন স্বাচ্ছন্দ্য মননে।

জাতি গড়ার মহান কারিগর শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর কবির চিন্তাশীলতা ছিল প্রাসঙ্গিক শুধু নয়, সুদূরপ্রসারীও। দেশপ্রেমিক এবং মাতৃভাষার প্রতি অনুরক্ত কবি শিক্ষাজীবনের সূচনাকাল থেকে জীবনব্যাপী দেশীয় ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির যোগসাজশে আধুনিকতার অবিমিশ্র ধারাকে যুক্ত করতে ছিলেন দ্বিধাহীন। কবি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছান শিক্ষা প্রণালী হওয়া উচিত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের মহাসম্মিলনে এমন এক সর্বজনীন জ্ঞানচর্চা, যা সবাইকে নিজের দেশ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা দেবে এবং যথার্থভাবে চেনার সুযোগও তৈরি করবে। বিশ্বজনীনতার অপার সম্ভাবনাও শিক্ষার আনুষঙ্গিক বিষয় হিসেবে সম্পৃক্ত থাকবে, যা একটি দেশ কিংবা জাতির সসম্মানে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার নিয়ামক শক্তি। কট্টরভাবে গ্রহণ-বর্জন কোনোটারই পক্ষপাতী ছিলেন না। দেশকে বাদ দিয়ে যেমন বিশ্ব নয়, তেমনি বিশ্বকে আলাদা করে জাতি তার সার্বিক জ্ঞান ভান্ডা আয়ত্তে আনতে হিমশিম খেতে হয়। সরাসরি কবির উক্তি স্মরণ করছি- ‘আপনাকে ত্যাগ করিয়া পরকে চাহিতে যাওয়া যেমন নিষ্ফল ভিক্ষুকতা, পরকে ত্যাগ করিয়া আপনাকে বঞ্চিত রাখা তেমনি দারিদ্র্যের চরম দুর্গতি শিক্ষার প্রারম্ভিক স্তরে স্বদেশকে চেনাটাই জরুরি। মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার দ্বার উন্মোচন করাও এক প্রকার জাতিগত দায়বদ্ধতা।

সঙ্গত কারণে শিক্ষা পদ্ধতি হতে হবে আপন সংস্কৃতির বেড়াজালে মন মনন বিকাশের সুনিশ্চিত গন্তব্যে। শিশু বয়সের প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব সূচনাকালে কবির স্মৃতি সুখকর ছিল না। জীবনস্মৃতিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘কান্নার জোরে ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে অকালে ভর্তি হইলাম। সেখানে কি শিক্ষালাভ করিলাম মনে নাই। কিন্তু একটা শাসন প্রণালীর কথা মনে আছে। পড়া বলিতে না পারিলে ছাত্রদের বেঞ্চে দাঁড় করাইয়া তাহার দুই প্রসারিত হাতের ওপর ক্লাসের অনেক শ্লেট একত্র করিয়া চাপাইয়া দেওয়া হইত এমন অসহনীয় শাস্তিগুলো কবির অন্তরে চিরস্থায়ীভাবে গেঁথে যায়। শেষ জীবনে যা তাকে তাড়িত বিড়ম্বিত করে। নিজের জীবনের শিক্ষা আরম্ভের দুঃসহ স্মৃতি এতই বিমর্ষে ভরা ছিল, যা তাকে সব সময়ই পীড়া দিতে পিছু হটত না। বাল্যকালের নিরানন্দ শিক্ষা পদ্ধতির ওপর এক প্রকার অনাগ্রহ কবির শিশুকাল থেকেই ভেতরের বোধে প্রচ্ছন্ন হয়েছিল। সেই সময় কবির ধারণা ছিল পাঠ্য পুস্তকের সঙ্গে আনন্দযজ্ঞের উপকরণ সন্নিবেশিত হতে পেছনে পড়ে গেলে শিক্ষা যেমন ন্ডি হয়, একইভাবে ভেতর থেকে যথার্থ গ্রহণযোগ্যতার সাড়া মেলে না। আবশ্যক-অনাবশ্যক সবই যেন কণ্ঠস্থ করতে হয়। যা সত্যিকার অর্থে যদিওবা কিছু কাজ চলে, মূলত মনন বিকাশের পথ যেন রুদ্ধতার জালে আটকা পড়ে। পরিণত বয়সে পরিপক্ব ধ্যান-ধারণা কিংবা বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় যখন শিক্ষার প্রসঙ্গ এসে যেত, আপন চিন্তাশীলতায় কবি যেন স্বদেশের প্রতি অনুভবে মাতৃভাষাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতেন।

কবির সময় ছিল ঊনবিংশ শতকের নবজাগরণের সুবর্ণকালই শুধু নয়, আধুনিক ইউরোপীয় শিক্ষা প্রণালীর অবধারিত নবঅধ্যায়ও। নতুন সময়ের সঙ্গে বিরোধ ঘটে পুরনো ধ্যান-ধারণার। সঙ্গত কারণেই নবযুগ আর প্রচলিত সংস্কারের দ্বন্দ্ব উপস্থিত সময়ের জন্য অনুকূল হয় না। সেটা কবির বুঝতে সময় লাগেনি অসাধারণ মননদক্ষতায়। নিজে যখন শান্তিনিকেতনে বিদ্যাশিক্ষার দ্বার উন্মোচন করলেন, সেখানে সবার আগে সামনে এসে দাঁড়ায় প্রাচীন ভারতের গুরুগৃহের অনন্য পাঠ গ্রহণ। নিজস্ব নৈসর্গিক স্নিগ্ধতায় তপোবন বিদ্যালয়ের যে চিরায়ত নমুনা, সেখান থেকেই কবির বিদ্যাপীঠ তৈরির প্রাথমিক বোধ জেগে ওঠে। সুতরাংব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে বিদ্যালয়টি কবির চেতনালব্ধ বোধের নব আবিষ্কার। শান্তিনিকেতনে বিদ্যাশ্রমের যাত্রা এভাবে সূচনা করলেও কালক্রমে তা বিশ্বজনীনতার অপার সমারোহকেও সম্পৃক্ত করতে কবির যুগোপযোগী কার্যক্রম আজও তার স্বাক্ষর বহন করছে। তার মতে দেশীয় ঐতিহ্য কিংবা চিরায়ত সংস্কৃতির আবাহনই শুধু নয়, পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান উন্নত জাতি গঠনে নিয়ামক ভূমিকা রাখবে। বিজ্ঞানের সর্বশেষ অর্জন শুধু শিক্ষা কর্মযোগে নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনে তার যথার্থ প্রয়োগও অনিবার্য। কারণ, মূর্খ মূঢ় পিছিয়ে পড়া সিংহভাগ মানুষ যদি নব আবিষ্কারকে ধরতে ব্যর্থ হয় তাহলে কৃষিতে আধুনিকতার সুফল আসতে বহু দেরি হয়ে যাবে।

সর্বসাধারণের উপযোগী শিক্ষা, যা শুধু জ্ঞানের পরিধি কিংবা মানসিক বিকাশকে সমৃদ্ধ করবে না, বরং প্রতিদিনের কর্ম জীবনপ্রবাহে আবশ্যকীয় উপাদানও যোগাবে। মুখস্থ করা বিদ্যাচর্চা কখনোই সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে গড়ে উঠতে দেয় না। শিক্ষা হবে সর্বজনীন এবং তা সব মানুষের মৌলিক অধিকার। যেখানে সবার সামনে থাকবে মাতৃভাষা মাতৃভূমি। বিজাতীয় ভাষা কিংবা ভিনদেশী পরিবেশ যথার্থ শিক্ষার অনুবর্তী হতে পারে না। বলতে দ্বিধা করেননি শিক্ষায় মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ। যার অভাবে শিশুদের জ্ঞান পরিপুষ্ট হয় না। সর্বাঙ্গীণ হতেও হোঁচট খায়। ফলে শিশু বয়সের নানামাত্রিক বিড়ম্বনাকে পাশ কাটানোও যায় না। নিজের শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে গৎবাঁধা জ্ঞানচর্চার বদ্ধ পরিবেশ কবিকে এতই ব্যাকুল করে দিত যে, আন্দামান দ্বীপে আটকে থাকাটাই যেন শৈশবকালের শিক্ষা পাঠদান। ১৯১২ সালে লিখছেন কবিজীবন স্মৃতি উল্লিখিত অংশগুলো জীবন স্মৃতি থেকে নেওয়া, যখন তার বয়স ৫২ বছর। জোর করে ইংরেজি ভাষার প্রতি উদ্বুদ্ধ করাকে সেই শিশুকাল থেকেই মানতে পারেননি। যাকে কবি বিভীষিকাময় আঁধার বলে চিহ্নিত করেছেন।

ঠাকুরবাড়িতে মাতৃভাষার চর্চা ছিল সবার আগে। তবে ইংরেজি ভাষাকে সেভাবে উপেক্ষা কিংবা অবজ্ঞাও করা হয়নি। প্রতিদিনের জীবন এবং সংশ্লিষ্ট পরিবেশ যদি শিক্ষার অনুষঙ্গ না হয় তাহলে তা যথার্থ প্রয়োজনে আসতে বিলম্বিত হবে। ঠাকুরবাড়ির সমৃদ্ধ পরিবেশে গড়ে ওঠা কবির ইংরেজি সাহিত্যের প্রতিও ছিল গভীর আগ্রহ। তবে শৈশবকালীন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ইংরেজিকে যেভাবে মুখস্থ কিংবা চাপানো হতো সেটাই ছিল অপছন্দের তালিকায়। নিজের আনন্দ আর পরম আগ্রহে যে কোনো ভাষা আয়ত্তে আনা সমৃদ্ধ মননবোধ তৈরিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। কবি নিজেই তেমন ধারাকে অনুসরণ করতেন বরাবর। শিক্ষার সঙ্গে যদি প্রাত্যহিক জীবনের ফারাক তৈরি হয়ে যায় তাহলে সাধারণ মানুষের জীবন পরিপূর্ণ হতে বাধাগ্রস্ত হবে। শুধু ভাব প্রকাশ কিংবা সাহিত্যচর্চা নয়, প্রতিদিনের কর্মযোগেও শিক্ষার নিবিড় সংযোগ থাকা আবশ্যক, যা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উদ্দীপ্ত করার পাশাপাশি নিত্যজীবন প্রবাহেও রাখবে যথাযথ ভূমিকা।

কবির মনে হতো মাতৃভাষায় যদি বিজ্ঞানচর্চা না হয় তাহলে প্রযুক্তির আলোকিত জগৎ থেকে সাধারণ মানুষ বিচ্ছিন্ন থাকবে। দেশের সার্বিক জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। গ্রামনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতির পুরো নিয়ন্ত্রক এক চালিকা শক্তি হতদরিদ্র প্রজাসাধারণ। কৃষির পশ্চাৎপদ চাষাবাদ পদ্ধতি আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার দরজায় কড়া নাড়তে না পারলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শুভ সূচনা হতে বহু সময় ব্যয় করতে হবে। আধুনিকতার নির্মাল্যে সবাইকে সংযুক্ত করতে হলে বিজ্ঞানের সর্বশেষ অর্জনও কাজে লাগানো বাঞ্ছনীয়। কবি বিজ্ঞানকে, সৃজনশীলতাকে, নতুন আবিষ্কারকে মানুষের নিত্য কর্মযোগে অবিচ্ছেদ্য করার তাগিদ অনুভব করেছেন। তাই শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় নয়, ব্যবহারিক কর্মযোগেও মাতৃভাষাকে সমধিক গুরুত্ব দেওয়ার ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেছেন। চীন, রাশিয়া, জাপানের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলো সফর করে কবির এই ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়। এসব দেশ মাতৃভাষাকে অবলম্বন করে শুধু শিক্ষা নয়, প্রকৃতিকে জয় করেছে, বিজ্ঞানকে নিজের বশীভূত করেছে, শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে। কৃষি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার সমস্ত প্রযুক্তি প্রয়োগ করেছে।

জাপান যাত্রী প্রবন্ধে পুত্র রথীন্দ্রনাথকে লিখেছেনÑকিছুদিন আগেও এখানকার সাধারণ জনগোষ্ঠী আমাদের সমাজ থেকে অনেকখানি পিছিয়ে ছিল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে কি করে তারা তাদের সমস্ত কূপম-ূকতা, হীনমন্যতা, জড়তা এবং অশুভ সংস্কারকে জয় করে আজকের এত বড় অর্জন এবং সম্মানের জায়গায় নিয়ে এসেছে। এসব দেশেও এক সময় প্রকৃতির অন্ধ পূজা ছিল, শক্তিহীনতা, দৌর্বল্য ছিল, বংশানুক্রমিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রায় অসাড়তা ছিল। কিন্তু তারা আত্মশক্তিতে জেগে ওঠে সুনির্দিষ্ট এক ব্যবস্থাপনাকে সামনে রেখে। কবির মনে হয়েছিল শিক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যার মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠী নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছানোর নিশানা খুঁজে পায়। অবশ্যই মাতৃভাষাকে পুঁজি করে। সারাদেশের সার্বিক মানোন্নয়ন কতিপয় বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব দ্বারা হয়নি। সর্বসাধারণের নিরন্তর অংশগ্রহণের সার্থক প্রয়াসের সুফল দেশ জাতি মিলিতভাবে ভোগ করছে।

প্রায় শতবর্ষ আগে রবীন্দ্রনাথের এই যৌক্তিক বাণী আজও আমরা সফলভাবে অর্জন করতে পারিনি। ভাষার জন্য লড়াই করা জাতি আমরা। সেই মাতৃভাষাকে যথাযথ স্থানে আজও বসানো কি সম্ভব হয়েছে? প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষ করে শিক্ষা প্রণালীতে মাতৃভাষা কতখানি অনিবার্য এবং যৌক্তিকভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে সেটাও বিবেচনা সাপেক্ষ। স্বদেশীয় কৃষ্টি ঐতিহ্যিক ধারা কি মাত্রায় আমাদের শিক্ষাজীবনকে চালিত করছে তাও ভেবে দেখার অবকাশ আছে। সেই পুরাকাল থেকে আজ অবধি নানামাত্রিক ভিনদেশী ভাষা কৃষ্টি শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোন পর্যায়ে দাঁড় করাচ্ছে সেটা ভাবার সময় বোধ হয় পার হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার পারিপার্শ্বিক সামাজিক প্রতিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, বিকাশ লাভ করে, এমনকি নিজেকে সমর্পণও করে। যেখানে জীবনঘনিষ্ঠ কার্যক্রম জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করতে না পারলে শিক্ষা নামক বৃহৎ এবং মহৎ কর্মযোগটি তার মর্যাদা হারাতে সময় নেয় না। এমন সব প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়েও কবি উদ্বিগ্ন থাকতেন, শঙ্কিত হতেন। একটি উপমা দিয়ে কবি উল্লেখ করেছেনÑ শস্যক্ষেত্রের মাটি যত উর্বর আর সরস থাকে সেখানে ফসল ফলাতে কালক্ষেপণ হয় না। খরা মৌসুমে সরস ভূমিও কাঠফাটা রোদে চাষের অনুপযোগী হয়ে যায়। সঙ্গত কারণেই বৃষ্টি¯œাত পরিবেশও অত্যাবশ্যক হয়। শিশু মনস্তত্ত্বও তাদের বয়োবিকাশে তেমন ধারায় এগিয়ে যায়। সেখানে যদি কোনো ব্যবচ্ছেদ পড়ে তাহলে তাকে অসময়ে নয়, বরং যথার্থ সময়ে প্রতিকার করাও জরুরি। তার সঙ্গে সাহিত্য-গগন থেকে কয়েক পশলা বৃষ্টি যদি অবারিত হয় তাহলে সেই প্রবাদ বাক্যই উল্লেখ করা যায়Ñ ‘ধন্য রাজার পুণ্য দেশ

লেখক : সাংবাদিক

×