ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সার মোকাবিলা

প্রকাশিত: ২২:১২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ক্যান্সার মোকাবিলা

.

ক্যান্সারের চিকিৎসা দেশে অপ্রতুল, এটি বহুল উচ্চারিত। ক্যান্সার চিকিৎসা যে যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সেটিও অজানা নয়। এবারের বিশ^ ক্যান্সার দিবসে দেশে ক্যান্সার রোগী তার চিকিৎসা বিষয়ে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা উদ্বেগজনক। ভর্তি উপযোগী অন্তত ৫০ রোগীকে প্রতিদিন ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক। প্রতিবছর এক লাখের ওপরে রোগী মারা যাচ্ছে।

সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে এই মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব। দিবসটির বছরের প্রতিপাদ্যসেবায় পার্থক্য কমিয়ে আনুন ক্যান্সার শনাক্ত চিকিৎসায় ধনী দরিদ্রে, গ্রামে শহরে, নারী-পুরুষে যে পার্থক্য এখনো আছে, তা কমিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি সমন্বিত ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র থাকা দরকার। সমন্বিত ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্রের অর্থ হচ্ছেÑ প্রয়োজনীয় জনবলসহ এসব কেন্দ্রে ক্যান্সার শনাক্ত পরীক্ষার সব ধরনের সুযোগসুবিধা, সব ধরনের থেরাপি (কেমো রেডিও থেরাপি) অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকবে। বাংলাদেশে এমন কেন্দ্র থাকা দরকার ১৭০টি। কিন্তু সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে এমন কেন্দ্র আছে ৩৩টি। এর মধ্যে পেট- সিটি স্ক্যানের সুযোগ আছে কেবল সাতটি প্রতিষ্ঠানে। হাসপাতালের পাশাপাশি রয়েছে যন্ত্রপাতি সংকটও। ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৮০ শতাংশের রেডিও থেরাপির প্রয়োজন হয়। রোগীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ৩০০টি রেডিও থেরাপি মেশিন দরকার। সরকারিভাবে ৯টি কেন্দ্রে মাত্র ১৭টি রেডিও থেরাপি মেশিন আছে। তার আবার ১১টি- নষ্ট। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা হাসপাতালে রেডিও থেরাপির সিরিয়ালের জন্য তিন থেকে চার মাস অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য করছে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট।

তাই ক্যান্সার মোকাবিলায় নতুন করে সক্রিয় হওয়া আবশ্যক। গ্লোবাল ক্যান্সার ইনসিডেন্স, মর্টালিটি অ্যান্ড প্রিভিলেন্স (গোবোক্যান) পরিসংখ্যান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অধীন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) সর্বশেষ তথ্যানুসারে, প্রতিবছর গড়ে দেড় লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। তাদের এক-তৃতীয়াংশ রোগীই চিকিৎসার বাইরে থাকছেন। অপরদিকে দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা অপ্রতুল থাকায় প্রতিবছর বিদেশমুখী হচ্ছেন বিপুল সংখ্যক রোগী।

অনতিবিলম্বে আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অন্তত একটি করে আধুনিক ক্যান্সার রোগনির্ণয় মেশিন  (পেট-সিটিস্ক্যান) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া চাই। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না, বেসরকারি পর্যায়েও ত্বরিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কেননা, লাখ লাখ রোগী বর্তমানে মানসম্পন্ন চিকিৎসা করানোর অপেক্ষায় রয়েছেন। ক্যান্সার চিকিৎসায় ওষুধের ব্যয় কিভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেটি সরকারি কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকতার সঙ্গে ভেবে দেখতে হবে। প্রয়োজনে মারণব্যাধির প্রতিকারে আলাদাভাবে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারাও নমনীয় হবেন, এটিও প্রত্যাশা। ক্যান্সার চিকিৎসা বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি দক্ষ চিকিৎসক-নার্সসহ জনবল তৈরি করা এবং চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর দিকে জরুরি নজর দেওয়া চাই।

×