ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাঠ্যক্রমের নব সংযোজন

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ৯ জুন ২০১৯

 পাঠ্যক্রমের নব সংযোজন

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। প্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি শিক্ষা কার্যক্রমের যে পর্যায়ক্রমিক ধারা, সেটা কখনও এক জায়গায় আটকে থাকেনি। সময়ের মিছিলে, আধুনিকতার বিস্তৃত বলয়ে, তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নে শিক্ষা নামক জাতির মহান সূচকটি নিত্য-নতুন পাঠ্যক্রমে অভিষিক্ত হয়েছে। জ্ঞানচর্চার এই অবিস্মরণীয় পর্যায়টি যুগের চাহিদা মেটাতে সব সময় সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রবহমান ধারায় শিক্ষা কার্যক্রম কোনভাবেই পিছিয়ে থাকতে পারে না। যুগোপযোগী লক্ষ্যকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার ২০১২ সালে করা সর্বশেষ শিক্ষা পাঠ্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে কর্মপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিবর্তনের এমন ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নতুন পাঠ্যক্রম তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম বিভাগ ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী প্রণয়ন করতে শুরু করেছে। মাদ্রাসা বোর্ডও এই নতুন শিক্ষা পাঠ্যক্রমের আওতাভুক্ত থাকবে। পর্যায়ক্রমিকভাবে এই পরিবর্তনের ধারাকে বেগবান করে নির্দিষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। বিষয়গত ব্যাপারে পরিবর্তন না আসলেও পাঠ্যসূচীর ব্যাপ্তিকে সঙ্কুচিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাঠ্যক্রমের চাহিদা অনুযায়ী বইয়ের সংখ্যাও নির্ধারণ করার পরামর্শ এসেছে। নতুন পাঠ্যক্রমে কর্মসংস্থানের ব্যাপারটিও বিশেষ বিবেচনায় এসেছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমিক ধারায় পাঠ্যসূচী তৈরির পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষা সেইভাবেই শুরু হবে। অর্থাৎ ২০২১ সালে যারা নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বই পাবে তাদের পরীক্ষাও শুরু সেই বছরে। এভাবে ২০২৪ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করা হবে পরিবর্তিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী। পাঁচ বছর পর পর পাঠ্যসূচী পরিবর্তনের কথা থাকলেও ২০১২ সালের পর পাঠ্যক্রমে কোন হাত দেয়া হয়নি। প্রায় ৯ বছর পর শিক্ষা কার্যক্রমের পাঠদান ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের নতুন দিকনির্দেশনা আনতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ২ বছরে বর্ধিত করা হচ্ছে, আগে যা ছিল মাত্র এক বছর। ভবিষ্যতে শিশুরা প্রথম শ্রেণীতে পাঠ গ্রহণের আগেই দুই বছর প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় তাদের লেখাপড়ার বিষয়টি শুরু করবে। নতুন পাঠ্যসূচী তৈরিতে এনসিটিবি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আমলে নিয়েছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার, ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০৩০ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হতে রূপকল্প অর্জন। শুধু তাই নয়, আধুনিক বিশ্বের পাঠ্য কর্মসূচীর সঙ্গে সমন্বয় করে গড়ে তোলা হবে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষা সর্বজনীন, ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। নতুন সময়, তথ্যপ্রযুক্তির নব উদ্ভাবন, বিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় যাত্রা সবকিছুকে প্রাধান্য দিতে হবে শুরু হওয়া মহান কর্মপ্রকল্পে। কর্মসংস্থান, উৎপাদনমুখী শিক্ষা এবং জীবন ও জীবিকা সহযোগী শিক্ষা পাঠ্যক্রম নতুন প্রজন্মকে উপহার দিয়ে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ে তোলা যুগ ও সময়ের দাবি।
×