
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) পুত্রজায়ায় শ্রমবাজার নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। তবে ২১ মে ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য ফের উন্মুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। বৈঠকে মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তাকর্মী, নার্স, কেয়ারগিভারসহ দক্ষ কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা পান। তাদের যেন অন্য দেশের শ্রমিকের মতো মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হয়, সে অনুরোধ দেশটির কাছে করা হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার আগে কয়েকটি শর্ত দিয়েছে মালয়েশিয়া।
আগামী ৬ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ শ্রমিক নেবে বলে আশা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক নেবে বিনা খরচে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া আগামী কয়েক মাসে এক থেকে দেড় লাখ বিদেশী শ্রমিক নিতে পারে। দেশটি নেপাল, মালদ্বীপসহ আরও পাঁচটি দেশ থেকে শ্রমিক নেবে। লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশসহ সবার জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। তখন দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগ ছিল।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানে মালয়েশিয়া দেশের অন্যতম শ্রমবাজার। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এটি একবার খোলে, আবার বন্ধ হয়, আবার খোলে। যার অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট ও অব্যবস্থাপনা। কোরিয়া ও জাপানে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কখনো অনিয়ম পরিলক্ষিত না হলেও মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটি ঘটছে। গত বছর সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। সে সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ থেকে যেতে না পারা কর্মীদের দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ করে দেবেন। সেই প্রতিশ্রুতিই যেন এখন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, যা আশাব্যঞ্জক। শ্রমিক হিসাবে যারা ভাগ্যান্বেষণে প্রবাসে পাড়ি জমান, তাদের অধিকাংশই দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশ। তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশকে এগিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সরকারের অবিলম্বে এদিকে নজর দেওয়া দরকার বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত। একইসঙ্গে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু শ্রমিকরা যেন কোনোভাবেই প্রতারণার শিকার না হন, তা-ও নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।
প্যানেল