ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

যে ক্ষমতার যত কাছাকাছি সে আন্দোলনে তত ত্যাগী: উমামা ফাতেমা

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ৭ জুলাই ২০২৫

যে ক্ষমতার যত কাছাকাছি সে আন্দোলনে তত ত্যাগী: উমামা ফাতেমা

ছ‌বি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সম্প্রতি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে জুলাই মাসের অভ্যুত্থান এবং সেই সময়ের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেছেন। তিনি লেখেন, জুলাই একটা সামষ্টিক ঘটনা। অভ্যুত্থানে ব্যক্তির ভূমিকা ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তখন সবচেয়ে বড় ত্যাগ ছিল নিজের অস্তিত্বকে সমগ্রের মধ্যে বিলীন করে ফেলা।

উমামা জানান, ৫ আগস্টের আগের আন্দোলন ছিল সবাইকে নিয়ে, একসাথে। কিন্তু এরপর আন্দোলন যেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। কার অবদান কত, কে কতটা সাহসী— এসব নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যারা কষ্ট করে সামনে থেকেছেন বা পেছন থেকে সহায়তা করেছেন, তাদের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উমামা লিখেছেন, প্রতিবাদ করতে গেলে শুনতে হয়— ‘তুমি এতদিন কই ছিলা’। এর উত্তর দিতে দিতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, “ধরুন, একজন মানুষ চাকরি করেন, তার সংসার আছে, সন্তান আছে। তিনি রাস্তায় নামতে পারেননি, কিন্তু আহতদের জন্য রক্ত জোগাড় করেছেন, বিকাশে টাকা পাঠিয়েছেন, ফোনে রিচার্জ করে দিয়েছেন। আবার কেউ রান্না করে মিছিলে খাবার পাঠিয়েছেন, কেউ গরমে পানি বিতরণ করেছেন। এগুলোর কি কোনও মূল্য নেই?”

তিনি স্মরণ করেন, এক আঙ্কেল মিরপুর থেকে চুপিচুপি শাহবাগে গিয়েছিলেন শুধু পানি বিলি করতে। হিটস্ট্রোকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপরও তিনি উমামাকে সুরক্ষা দিয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত নিয়ে যান। গুলির সময় তারা আলাদা হয়ে যান। পরে অভ্যুত্থানের পরদিন আঙ্কেলই তাকে খুঁজে বের করেন। দু’জনেই দেখেছিলেন এক রিকশাওয়ালার প্রাণান্তকর চেষ্টা, যিনি গুলিবিদ্ধ এক ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই ছেলেটার নাম ছিল নাফিজ।

উমামা বলেন, “এই মানুষগুলোর অবদান কোন পাল্লায় মাপা যায়? যে ফোনে রিচার্জ করে দিল, যে গৃহিণী খাবার দিল, যে পানি বিলি করল—তারা তাদের সর্বোচ্চটুকুই করেছে। তারা যদি আমার বা আপনার জায়গায় থাকত, তাহলে তারাও আমাদের মতোই করত। আমাদের কারো অবদানই কম নয়। আমরা সবাই আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করেছি।”

তবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু মানুষ ছিল যারা সব সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও চুপ থেকেছে, আর আন্দোলনের পরে গলা ফাটিয়েছে। তাদের হিসাব আলাদা। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেভাবে লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে, সেটার কোনো তুলনা হয় না।

সবশেষে তিনি বলেন, লড়াইয়ের সময় অবদানের প্রশ্ন গৌণ। অবদানের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন রাজনৈতিক ফায়দার প্রশ্ন আসে। আপনি যদি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ হয়ে যান, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি কিছুই করেননি। ক্ষমতার সাথে আন্দোলনের অবদান এখন সমানুপাতিক। যে যত ক্ষমতার কাছাকাছি, সে তত ত্যাগী। তাই ভবিষ্যতের আন্দোলনে নামার আগে ক্ষমতা থেকে সার্টিফিকেট নিয়েই মাঠে নামা উচিত।

এম.কে.

×