ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাংবাদিক নূরুল কবির

ছোট একটা এনজিও চালিয়ে রাষ্ট্র বোঝা যায় না

প্রকাশিত: ১২:২৬, ২৬ মে ২০২৫; আপডেট: ১২:২৯, ২৬ মে ২০২৫

ছোট একটা এনজিও চালিয়ে রাষ্ট্র বোঝা যায় না

বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, গণতন্ত্রের সংকট ও ক্ষমতার কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নূরুল কবির। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, "ছোট্ট একটি এনজিও চালিয়ে কিংবা ব্যাংকের কর্মকর্তা বা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে রাষ্ট্র বোঝা যায় না।"

নূরুল কবির বলেন, “ছোট একটা এনজিও চালিয়ে, ছোট কোন একটা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে, কিংবা কোন একটা ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে রাষ্ট্র বোঝা যায় না।” তিনি জানান, রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনীতি, গণতন্ত্র ও সংস্কারের গভীর ভাবনা ছাড়া গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্ভব নয়।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “যেই বিএনপি সংস্কার করার অভিযোগে বহু লোকদেরকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে দিছে, যেই সমাজের সংস্কারপন্থী একটা গালি হিসেবে শনাক্ত হয়েছিল, তারা যখন সংস্কার প্রস্তাব দেয়, বুঝতে হবে মনের ভিতরে হঠাৎ এই পার্টির নেতারা গণতান্ত্রিক হয়ে গেছে? একদম না।”

তার মতে, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কার কিভাবে হয়, তা বোঝে না। “কারণ, নিজস্ব তাদের কোন সংস্কার দর্শনও নাই, রাষ্ট্রদর্শনও নাই,” বলেন তিনি। “এই মন্ত্রীরা এত কথা বলে। আপনি বলুন তো, কি ধরনের সংস্কার প্রয়োজন? কি ধরনের সংস্কার হলে গণতন্ত্র হয়? আপনি কারোর কাছ থেকে একটা বাক্য শুনেছেন?”

তিনি বলেন, গত ১০ মাসে কোনো মন্ত্রীর মুখে এ ধরনের কোনো কথাই শোনা যায়নি। তারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতার উৎস সম্পর্কেই বোঝে না। বরং তাদের ধারণা, ছাত্ররা তাদেরকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে, তাই তারা তাদের ‘এপিস’ করে এমন মনোভাবেই তারা চলেন।

নূরুল কবির বলেন, “দেশের মানুষের ম্যান্ডেট লাগে। দেশের মানুষের ম্যান্ডেট ইজ বিং রেপ্রেজেন্টেড যখন নির্বাচন থাকে না।বাই দি পলিটিক্যাল পার্টিস, সোশাল অর্গানাইজেশনস, সিভিল সোসাইটি। তো ওনারা তো শুধু কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে। আর বাকি যাদের সঙ্গে কথা বলে, প্রতিবার চাপের মুখে। বিএনপি-অন্যান্য পার্টি বলতে থাকে, আমরা ছয়দিন ধরে, চারদিন ধরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাচ্ছি। তারপর একটা মিটিং হয়! খেয়াল করুন।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংস্কার বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে নির্বাচনের পর সমাজে বড় আন্দোলন হলে, অথবা চাপ তৈরি হলে কিছু কিছু সংস্কার আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“বড় বড় সংগ্রাম যখন হয় সমাজের মধ্যে, এবং যারা যারা ভোট করে ক্ষমতায় আসতে হয়-এ তাদের মত না। ভোট করে ক্ষমতায় আসতে হলে, তো ওই জনগণ সংগ্রাম করেছিল, তাদের ভোট আদায় করতে হয়, তাদের সমর্থন লাগে। তিন সপ্তাহে হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে কেবলমাত্র একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য। এই বোধ যতদিন থাকবে, ততদিন সরকার আগের মত স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করতে পারবে না,” বলেন তিনি।

নূরুল কবির আরও বলেন, সমাজের মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কারের যে অনিবার্য চাপ তৈরি হয়েছে, তার কারণেই বিভিন্ন দল এখন সংস্কারের কথা বলছে। 

বিএনপির কথিত ৩১ দফা ও ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাবের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এই সরকার বা দলগুলো এক সময় সংস্কারপন্থীদের গালি দিত। আজ তারাই সংস্কারের কথা বলছে। এর মানে এই নয় যে তারা হঠাৎ গণতান্ত্রিক হয়ে গেছে। বরং সমাজের চাপেই তারা এই কথাগুলো বলছে।”

তিনি বলেন, “এই সরকারের বিরাট সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা প্রায় নিঃশেষ। কারণ সরকারে যারা আছে তারা গণতন্ত্র, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও তার উপাদানগুলো বোঝে না। ছোট একটা এনজিও চালিয়ে বা ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়ে রাষ্ট্রচিন্তা করা যায় না।”

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/mwm35ra4

আফরোজা

×