
ছবি: সংগৃহীত
হঠাৎ করেই ভারত স্থলপথে ছয়টি বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পোশাক, ফ্রুট ফ্লেভারযুক্ত খাদ্যসামগ্রী, পিভিসি ও কাঠের আসবাবপত্রসহ একাধিক পণ্যের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে ১৮ মে থেকে। এতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থলবন্দর দিয়ে যে পণ্য সহজেই পৌঁছানো যেত, এখন তা নিতে হবে নদীপথ কিংবা আকাশপথে, যা সময় ও ব্যয়ের দিক থেকে অনেক বেশি জটিল। বিশেষ করে পোশাক খাতে এ সিদ্ধান্ত বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।
ভারতীয় গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) বলছে, ভারতের এই পদক্ষেপ কেবল অর্থনৈতিক নয়—এটি একটি কূটনৈতিক বার্তাও বহন করছে। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় পণ্যের ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যার জবাবে ভারত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর এবং ভারত-বিরোধী ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য ভারতের চোখে কূটনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হয়েছে। সফরে দুই দেশের মধ্যে ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়, যা দিল্লিকে আরও সতর্ক করে তুলেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই জানায়, বাংলাদেশ গত এক বছরে ভারতীয় সুতা, চাল, কাগজ, মাছ, গুঁড়া দুধ এবং তামাকজাত পণ্যের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এসব বিধিনিষেধ ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে আরও কঠোরভাবে কার্যকর হবে।
তাছাড়া ভারতীয় পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের ভূমিপথ ব্যবহারে প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১.৮ টাকা করে ট্রানজিট ফি আরোপ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছে ভারত। দিল্লির ভাষ্য মতে, এই ফি ভারতের রপ্তানিকারকদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং এটি "দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করছে"।
বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে, যার অধিকাংশই যেত স্থলবন্দর দিয়ে। নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, এসব পণ্য এখন কেবল কলকাতা ও নাভা শেভা বন্দরের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবে ভারতে। ফলে পরিবহন ব্যয় ও সময় অনেক গুণ বেড়ে যাবে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
GTRI স্পষ্টভাবে বলছে, ভারতের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের সুতা আমদানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার জবাব।
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ হলেও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে নতুন উত্তেজনার আভাস মিলছে। দুই দেশই এখন একে অপরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অভিযোগ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান উত্তেজনা যদি কৌশলগত আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে আগামী দিনে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে।
নুসরাত