
রাজস্ব আদায় ও নীতি প্রণয়নের সুবিধার্থে
রাজস্ব আদায় ও নীতি প্রণয়নের সুবিধার্থে দীর্ঘ ৫৩ বছর পর ভেঙে দেওয়া হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সোমবার রাতে এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে এর পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করা হবে। কর প্রশাসন আধুনিকায়ন ও রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন নিশ্চিত করতে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোমবার রাতে এই অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। এ ব্যাপারে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এনবিআর বিভক্ত করায় রাজস্ব আদায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া সংস্থাটি বিলুপ্ত হলেও কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এনবিআর বিভক্ত করা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। ব্যাখায় প্রেস উইং বলেছে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে এনবিআর পুনর্গঠন অপরিহার্য। অবশ্য এই বিভক্তিতে খুশি হতে পারেনি সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব খাতকে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে তিন দিনের কলম বিরতি ঘোষণা করেছে তারা। ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আইএমএফ দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর জন্য সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এছাড়া দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়াতে এনবিআরকে দুইভাগে বিভক্ত করার তাগিদ দিয়ে আসছে।
তারই আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার সোমবার রাতে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ শীর্ষক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এখন অর্থ মন্ত্রণালয় তার আওতায় দুটি বিভাগ গঠন করবে। একটি হবে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং অপরটি হবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, করহার নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক কর চুক্তি তদারকি করবে। ব্যবস্থাপনা বিভাগ আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস আদায়, অডিট ও কমপ্লায়েন্স দেখভাল করবে। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিভক্ত করায় রাজস্ব আদায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত হলেও এর অধীনে থাকা কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। নতুনভাবে তৈরি হওয়া পলিসি ডিভিশন একটি ছোট ইউনিট হবে।
এনবিআর থাকবে আগের মতোই, কিছু টার্মস অব রেফারেন্সে কিছু পরিবর্তন হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিভক্ত করায় রাজস্ব আদায়ে কোনো প্রভাব পড়বে কি না সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আদায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না। এই পর্যন্ত ইতোমধ্যে রাজস্ব আদায় গত বারের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি হয়েছে। খুব হতাশাব্যঞ্জক না, আমি আরও আশা করছি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত কর নীতিনির্ধারণ ও কর প্রশাসনকে পৃথক করে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থের সংঘাত নিরসন এবং করের আওতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কাঠামোগত পুনর্গঠন অপরিহার্য।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানে প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যতম সর্বনি¤œ। যেখানে বৈশ্বিক গড় অনুপাত ১৬.৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এটি ১১.৬ শতাংশ।
জনগণের উন্নয়ন আকাক্সক্ষা পূরণে বাংলাদেশের জন্য অন্তত ১০ শতাংশ কর-জিডিপি অনুপাত অর্জন অত্যাবশ্যক। এতে বলা হয়, এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত- কর নীতিনির্ধারণ ও কর প্রশাসনকে পৃথক করে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থের সংঘাত নিরসন এবং করের আওতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের একই সঙ্গে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করে এবং অদক্ষতা বাড়ায়- এ নিয়ে ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব খাতকে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার এনবিআর কার্যালয়ের সামনে এনবিআর ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তারা এ কর্মসূচি পালন করেছে।
কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীরা জানান, বুধবার সকাল ১০টা থেকে ১টা, ১৫ ও ১৭ মে ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এনবিআর সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে কলম-বিরতি পালন করা হবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা, রপ্তানি ও বাজেট কার্যক্রম চলমান থাকবে।