ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ

প্রস্তাবিত নিম্নকক্ষে আনুপাতিক ভোটের পক্ষে নয় নাগরিক ঐক্য

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:০৬, ৮ মে ২০২৫

প্রস্তাবিত নিম্নকক্ষে আনুপাতিক ভোটের পক্ষে নয় নাগরিক ঐক্য

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বুধবার ঢাকায় সংসদ ভবনের এলডি হলে নাগরিক ঐক্যের বর্ধিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়

রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাঠামোগত সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া প্রায় সব প্রস্তাবে একমত জানালেও সংসদের নি¤œকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির ভোটের পক্ষে নয় নাগরিক ঐক্য। উচ্চকক্ষে ১০৫ আসনের মধ্যে পাঁচটিতে রাষ্ট্রপতির প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে সে ব্যাপারেও দ্বিমত আছে দলটির।
বুধবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাাহ কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম সংলাপে ৩৮টি বিষয়ে আমরা দ্বিমত করলেও আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদের মতো পার্থক্য অনেকখানি নিরসন হয়েছে। তারা আগে ১১৪টি বিষয়ে একমত হয়েছিলেন। বুধবার তারা ১১৮টি বিষয়ে একমত হয়েছেন। ৩৮টি বিষয়ে তাদের দ্বিমত থাকলেও মতপার্থক্য অনেকখানি নিরসন হয়েছে। আর বাকি ১০টির বিষয়ে তারা আংশিক একমত।
সংলাপের সূচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, প্রতিটা রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থাকবে। কিন্তু কিছু মৌলিক জায়গায় আমাদের ঐকমত্যে আসতে হবে, এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যেকেই কিছু কিছু ছাড় দেবে, তাদের কাছ থেকে কমিশন এটাই প্রত্যাশা করে।
রাষ্ট্র সংস্কারে সমঝোতায় পৌঁছানোর সংলাপে ৮ এপ্রিল নাগরিক ঐক্য সংবিধান সংস্কার কমিশনের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বা আইনসভা গঠনের প্রস্তাবের বিপক্ষে মতো দিয়েছিল। এছাড়া সংসদে অর্থবিল ছাড়া সব ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুপারিশের সঙ্গেও পুরোপুরি এক মত ছিল না দলটি।
দ্বিতীয় দফা আলোচনার পর নাগরিক ঐক্যের নেতারা বলেছেন, ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে প্রথমদিন আলোচনায় ১১৪টির সঙ্গে একমত হলেও পরে দলীয় ফোরামে আলোচনার পরে ১১৮টিতে একমত হয়েছেন তারা।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, ‘নাগরিক ঐক্যের অবস্থান হল-সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে আমরা যেন ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, আমরা সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টে একমত ছিলাম না, এখন আমরা একমত হয়েছি। এখন আমরা আস্থা ভোট এবং অর্থবিল অর্থাৎ ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের বিপক্ষে নই।’
তিনি বলেন, ‘নি¤œ কক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়ে আমরা দ্বিমত জানিয়েছি। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় সেই পদ্ধতিততে নির্বাচনের কথা আমরা বলেছি। এখানে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে নানান ধরনের ঝামেলা হয়। তবে উচ্চকক্ষে অবশ্যই সংখ্যানুপাতিক হারে করতে হবে। আর উচ্চ কক্ষে ১০৫টি আসনের মধ্যে পাঁচ আসন রাষ্ট্রপতি পূরণ করবেন বলে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেটা রাখার পক্ষে নাগরিক ঐক্য।
নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, যেহেতু এটা (উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব) রাজনৈতিক মনোনয়ন থেকেই আসবে, ফলে আলাদা করে ৫০ শতাংশ সিভিল সোসাইটির জন্য বরাদ্দ করলে বাংলাদেশ একটা শক্তিশালী সিভিল সোসাইটি হারাবে। তখন সিভিল সোসাইটির সদস্যরাও চিন্তা করবেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের পর উচ্চকক্ষে যাওয়া যাবে।

কারণ, মনোনয়ন রাজনৈতিক দল থেকেই আসবে। এ কারণে তারা বাংলাদেশের একটি স্ট্রং সিভিল সোসাইটি, যারা নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করবে, সেটা চান। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব মোতাবেক কোনো দল এক শতাংশ ভোট পেলে তারা উচ্চকক্ষে আসন পাবে এটির সঙ্গে তারা একমত।
সাকিব আনোয়ার বলেন, উচ্চকক্ষে প্রতিনিধি নির্বাচনে একটি দলের ন্যূনতম ৩ শতাংশ ভোট পেতে হবে তারা এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।

সংবিধান সংস্কার কমিশন এ ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটের কথা বলেছে। তারা এটা সমর্থন করেন। তারা বলেছেন, কোনো একটা দল যদি ১ শতাংশ ভোটও পায়, তাদের একজন প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে থাকবেন।
ঐকমত্যে পৌঁছাতে নাগরিক ঐক্য ছাড় দেবে বলে জানান সাকিব আনোয়ার। তিনি বলেন, তাদের অবস্থান হলো, ছাড় দিয়ে হলেও যত বেশি বিষয়ে ঐকমত্যে আসা যায়। তারা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের বিপক্ষে নন। আস্থা ভোট ও অর্থবিল এ দুটো ছাড়া সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন এভাবে ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের কথা বলেছেন তারা।
সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। কিন্তু, শুধুমাত্র কমিশনের আলোচনাই যথেষ্ট নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও তাদের সহযোগী এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়ে জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, তারা প্রাথমিক পর্যায়ে যে ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে। তারা আশা করছেন, ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করতে পারবেন। তারপরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু“করবেন তারা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ছয় মাসের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে যত দ্রুততার মধ্যে সম্ভব একটি জাতীয় সনদের জায়গায় সবাইকে দাঁড় করানো। সেই চেষ্টায় দলগুলো সাহায্য-সহযোগিতা করছে।
আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে সহযোগিতা করা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চেষ্টা করছে। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করছি। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয় এই অর্থে যে আপনাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, আপনাদের সহযোগী শক্তি যারা, যাদের সঙ্গে আপনাদের ভিন্নমত আছে, তারাও একটু আলোচনা করুন নিজেদের মধ্যে।

তিনি বলেন, এটা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, জাতীয় সনদ তৈরির চেষ্টা, শুধু কমিশনের কাজ নয়। এটা জনগণের অর্পিত দায়িত্ব আমাদের ও আপনাদের (দলগুলোর) ওপর। আমাদের কাজটা হচ্ছে কেবল সহযোগিতা করা। তো সেই চেষ্টায় আপনারা অব্যাহত আছেন ও থাকবেন, এটা আশা করি।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন।

আরো পড়ুন  

×