ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

সেন্টমার্টিনের কথা বলে নেওয়া বালু-সিমেন্ট পাচার হলো মিয়ানমারে!

প্রকাশিত: ২২:০০, ২ মে ২০২৫; আপডেট: ২২:০৫, ২ মে ২০২৫

সেন্টমার্টিনের কথা বলে নেওয়া বালু-সিমেন্ট পাচার হলো মিয়ানমারে!

ছবি: সংগৃহীত

সেন্টমার্টিনে ‘পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র’ সংস্কারের জন্য সরকারি বরাদ্দে পাঠানো নির্মাণ সামগ্রী সিমেন্ট ও বালু মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী একটি ট্রলার তিনজন মাঝিমাল্লাসহ নিখোঁজ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেল পর্যন্ত ট্রলারের কোনো খোঁজ না মেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা থেকে টিআর প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দের সিমেন্ট, বালু, টিন ও কাঠ সেন্টমার্টিনে পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়। বরাদ্দের এসব মালামাল বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আশিকুর রহমানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃত বরাদ্দের চেয়ে বহুগুণ বেশি মালামাল ভুয়া অনুমতিপত্রের মাধ্যমে ট্রলারে তোলা হয়। বরাদ্দ ছিল মাত্র ২০ বস্তা সিমেন্ট, কিন্তু অনুমতিপত্রে উল্লেখ করা হয় ৪০০ বস্তা। এতে সরাসরি জালিয়াতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন।

উপজেলা প্রশাসন জানায়, ‘সেন্টমার্টিন পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র’ সংস্কারে টিআর প্রকল্পে অধীনে বিএমসিএম সদস্য আশিকুর রহমানের নামে সোমবার টেকনাফ থেকে ৯ বান্ডিল টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ৩০ কার্টুন টাইলস, ৩০০ ফুট বালু ও ২০ ব্যাগ সিমেন্ট সেন্টমার্টিন নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ভুয়া অনুমতি পত্র বানিয়ে ২০ ব্যাগ সিমেন্টের বদলে ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট উল্লেখ করে, যা প্রতারণা।

সেন্টমার্টিন ট্রলার মালিক সমিতি জানায়, ট্রলারটি সেন্টমার্টিনে না পৌঁছানোয় সন্দেহ হয়। পরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরকারি বরাদ্দের নামে সংগৃহীত মালামাল ট্রলারে তুলে তা সেন্টমার্টিনের বদলে পাচার করা হয়েছে মিয়ানমারে।

এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আশিকুর রহমান, সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার কামাল, স্থানীয় নুরুল ইসলাম, আবদুল মুনাফ ও কেফায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে। কেফায়েতকে চোরাকারবারি আক্তার কামালের ঘনিষ্ঠ হিসেবে স্থানীয়রা চেনেন।

এদিকে অভিযুক্ত আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিআর প্রকল্পের অনুমতিপত্র আমার নামে নেওয়া হলেও মালামাল বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে ছিল ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার। পরে জানতে পেরেছি মালামাল পাচার হয়েছে। আমি এতে জড়িত নই, একটি চক্র আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

তবে ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তারও নিজের দায় এড়িয়ে বলেন, ‘বরাদ্দের অনুমতিপত্র হাতে পেলেও মালামাল বুঝে নেওয়া হয়নি। অনুমতিপত্রে জালিয়াতি করে অন্যরা এসব মালামাল তুলে পাচার করেছে।’

এ ঘটনায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, “২০ বস্তা সিমেন্টসহ কিছু মালামাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে ৪০০ বস্তা সিমেন্ট ট্রলারে তোলা হয় এবং তা পাচার হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ট্রলার, মাঝিমাল্লা এবং পাচার হওয়া মালামাল উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

রাকিব

আরো পড়ুন  

×