ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

প্রবাসীদের বর্ণনায় বিধ্বস্ত লেবানন, পুরুষরা পাঠিয়ে দিলেন স্ত্রী-সন্তানকে

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৩:০৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রবাসীদের বর্ণনায় বিধ্বস্ত লেবানন, পুরুষরা পাঠিয়ে দিলেন স্ত্রী-সন্তানকে

লেবানন থেকে আগত প্রবাসীরা।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই নম্বর টার্মিনাল দিয়ে ট্রলি ঠেলে একে একে বের হচ্ছেন যাত্রীরা। কিন্তু আগত যাত্রীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু, যাদের প্রায় কারও সঙ্গেই পরিবারের কর্তা পুরুষ মানুষটি। ওনারা ফিরছেন ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত দেশ লেবানন থেকে। 

কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে থাকা মানুষগুলো স্ত্রী সন্তানদের দেশে পাঠিয়ে দিলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্তা পুরুষমানুষটি থেকে গেছেন সেই মৃত্যু উপত্যকায়। তাই জীবন বাঁচাতে যেসব মা ও শিশু দেশের মাটিতে পা রাখতে পেরেছেন তাদের চোখেমুখে উৎকণ্ঠার শেষ নেই।

বেশিরভাগের স্বামী জীবিকার তাগিদে লেবাননের রয়ে গেলেও স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবার নিয়ে ফিরেছেন কয়েকজন। তারা তুলে ধরেন আগ্রাসী ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা।

এ বিষয়ে বিমানবন্দরে এক নারী বলেন, সরকারের সাহায্যে আসছি আমরা। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আমরা আসতে পারছি। যুদ্ধ লাগার তিন মাসে আমাদের কোনো কাজ ছিল না। খানাদানায় কষ্ট করেছি। সেদিন আমাদের বাসার সামনে বোমা ফেলেছিল, আল্লাহর রহমতে আমরা বেঁচে গেছি। তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। আমরা নতুন জীবন পেয়েছি। আমার বাচ্চা নিয়ে এসেছি। আমার স্বামী ওই দেশে, তিনি আসেননি।

লেবানন থেকে আগত আরেক নারী বলেন, ওই দেশের পরিস্থিতি একদম ভালো না। এখন দুই মাসে যুদ্ধ স্থগিত করছে কিন্তু এটা সম্ভব হয়নি। তারপরও যেদিন বলছে যে দুই মাস বন্ধ থাকবে তার পরের দিন থেকেই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নির্দেশে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে ওরা আবার বোম মারছে। আমি আর আমার সন্তান চলে আসছে।

লোহর্ষক বর্ণনা দিয়ে আরেকজন নারী বলেন, চার মাস ধরে আমরা যুদ্ধের মধ্যে ছিলাম। রাত্রে ঘরে ঘুমাইনি। জায়গায় জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছি, অনেক কষ্ট করেছি। আমরা বাবু নিয়ে চলে আসছি।

লেবানন থেকে দেশে ফিরতে মোট ১৮০০ বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন। গত বুধবার ৬৪ জন এবং বৃহস্পতিবার ১০৫ জনসহ এ পর্যন্ত লেবানন থেকে প্রায় ৯০০ বাংলাদেশি ঢাকায় ফিরেছেন। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে আনা হবে।

স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরা এক প্রবাসী বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান লেবাননের পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো। কিন্তু একটা যুদ্ধবিরতি চলছে দুই বছর দুই মাসের। আর দুই মাস আগের যে চিত্র এরা খুব ভয়াবহ ছিল লেবাননে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞ আর ধ্বংসযজ্ঞ লেবাননে।

লেবাননে প্রায় আট বছর ধরে থাকা আরেক প্রবাসী যুবক সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, পরিস্থিতি এই মুহূর্তে এখনও যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। খনও চলছে বর্ডারের দিকে। আর তার মধ্যে আমরা তো আগে নাম দিয়েছি। অবশ্য অনেকেই কষ্টে আছে। দেখা গেছে যে আজকে কেউ রুমে থাকতে পারে না। খাবার খেতে বসেছে, খাইতে পারতেছে না। খাবার খেয়ে চলে যাচ্ছে।

এদিকে, বাংলাদেশিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম। গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ৬০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী নিন্দারমুখে একটা যুদ্ধ বিরতির চুক্তি স্বাক্ষর হলেও এক সপ্তাহ না যেতেই আবারো মুসলিম প্রধান দেশটিতে হামলা চালিয়েছে উগ্র ইহুদিবাদী দেশটির সেনারা। 

এম হাসান

×