আমাদের দেশে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ইদানীং একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের আইনে এর কোনো যথোপযুক্ত শাস্তি বা প্রতিকার নেই।
বাংলাদেশের আইনে দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে, সেই নারীর সম্মতি সাপেক্ষে সম্পর্কে লিপ্ত হন, তবে সেই ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।
এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনা শ্রম বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে এ ক্ষেত্রে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত নারীর কোনো শাস্তির কথা এ আইনে বলা নেই। স্ত্রী যদি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে এ ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন না তাঁর স্বামী।
আইনের বিধান অনুযায়ী, স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ পাবেন না। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি, অপর কোন ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তিনি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। তবে এই ক্ষেত্রে স্ত্রীর কোনো শাস্তির কথা এই আইনে বলা নেই। এই আইনটি খুবই বৈষম্যমূলক একটি আইন।
ঢাকা সিটি করপোরেশন যে পরিমাণ বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে, তা সামাজিক বন্ধনের বিচ্ছিন্নতাকে চরমভাবে নাড়া দিয়েছে।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক করার অপরাধে সাজা-সংক্রান্ত দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে ৪৯৭ ধারা কেন অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারির আর্জি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া রিট আবেদনে ৪৯৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রার্থনা জানানো হয়েছে।
স্বামী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক জড়ালে তার বিরুদ্ধে স্ত্রী কোনো আইনগত প্রতিকার চাইতে পারবেন। অন্যদিকে স্ত্রী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ালে তার বিরুদ্ধে স্বামী ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। শুধু বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককারী পুরুষের বিরুদ্ধে নারী স্বামী ব্যভিচারের অভিযোগ আনতে পারবেন।
দণ্ডবিধির এ সংক্রান্ত ধারা কেন বৈষম্যমূলক এবং বাতিল হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। এই আইন সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটা অদ্ভুত ও বৈষম্যমূলক।
ফুয়াদ