ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৪ মার্চ ২০২৪

মাহে রমজান

পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৩তম দিবস

পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৩তম দিবস। মুসলিম মহল্লাগুলোর সব মসজিদে মাসে প্রতিদিনেই তারাবির পর মুমিনরা মুনাজাতে বলছেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাহ ওয়া নাউযুবিকা মিনান্নার।’Ñ পরওয়ারদিগার! আমরা এতকিছুর বিনিময়ে তোমার কাছে জান্নাত ভিক্ষা চাই আর পানাহ চাই জাহান্নাম থেকে। আজ আমরা সামান্য সময়ে জান্নাতের নানা হৃদয়কাড়া বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করব।

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম : বেহেশত কিসের  তৈরি? হজরত উত্তর দিলেন, পানির  তৈরি। আমরা বললাম, আমাদের উদ্দেশে বেহেশতের অট্টালিকা নির্মাণ সম্পর্কে অবগত করুন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বেহেশতের একটি ইট স্বর্ণের, অপরটি রূপার আর প্রলেপ হলো মেশকের।

এর মাটি জাফরানের আর কঙ্কর মুক্তা এবং ইয়াকুতের। যে ব্যক্তি  বেহেশতে প্রবেশ করবে  সে  কোনো প্রকার  নেয়ামত হতে বঞ্চিত ও নিরাশ থাকবে না।  সে ব্যক্তি অনন্তকাল সেখানে বসবাস করবে। কখনো তার মৃত্যু হবে না। তার পরিধেয় ভূষণ কখনো পুরাতন হবে না।  যৌবনও অটল থাকবে। অতঃপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তিন ব্যক্তির  দোয়া ফিরিয়ে  দেওয়া হয় না।

তারা হলেন- আদেল ইমাম অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ বাদশা ও বিচারক; রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় এবং অত্যাচারের শিকার ব্যক্তির দোয়া। তার প্রার্থনা  মেঘের উপরে উঠিয়ে  নেওয়া হয়। আল্লাহপাক বলেন, কিছু বিলম্ব হলেও আমি অবশ্যই  তোমায় সাহায্য করব।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:  বেহেশতে একটি বৃক্ষ আছে। যার ছায়ায়  বেহেশতবাসীগণ শত বছর চলার পরেও উহার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না। অধিকন্তু তারা এইরূপ  নেয়ামতসমূহ পাবে, যা  কোনো চক্ষু কখনো অবলোকন করেনি,  কোনো কর্ণ এর বর্ণনা কখনো  শোনেনি এবং  কোনো অন্তর উহার কল্পনাও করেনি। কুরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে, কেউ জানে না যে, সেখানে চক্ষুর প্রশান্তি প্রদানকারী কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। বেহেশতের একটা সামান্য বিন্দু পরিমাণ স্থানও দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা হতে উত্তম।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, বেহেশতী ব্যক্তির সৌন্দর্য ও মাধুর্য ক্রমশ বাড়তে থাকবে। পার্থিব জগতে তো ধীরে ধীরে বার্ধক্য নেমে আসে। সেখানে রূপ-যৌবনের মাধুর্যের ক্রমোন্নতি হতে থাকবে। হজরত সুহায়র রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন বেহেশতীরা বেহেশতে এবং দোযখীরা দোযখে চলে যাবে, তখন এক ঘোষক ঘোষণা করবে, হে বেহেশতবাসীগণ! আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি এক অঙ্গীকার করেছিলেন।

আল্লাহপাক তা পূরণ করতে চান। তখন বেহেশতীরা বলবে, সে অঙ্গীকার কি? আল্লাহপাক কি আমাদের নেকির পাল্লা ভারি এবং মুখমণ্ডল আলোকিত করেননি? তিনি কি আমাদেরকে বেহেশতে প্রবিষ্ট করাননি? তিনি কি আমাদেরকে দোযখ হতে মুক্তি দেননি? হুজুরের ভবিষৎ বাণী মোতাবেক পর্দা উঠিয়ে দেওয়া হবে। বেহেশতবাসীরা আল্লাহর দিদার লাভে ধন্য হবে। বর্ণনাকারী বলেন: আল্লাহর শপথ করে বলছি, বেহেশতীদের এটা অপেক্ষা অধিক প্রিয় এবং উত্তম অন্য কোনো নিয়ামত হবে না। হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে এই নেয়ামত দান করুন। 
হজরত আনাস বিন মালেক রাদিআল্লাহুতায়ালা আনহুর বর্ণনা, একবার জিবরাইল (আঃ) একটি সাদা আয়নাসহ মহানবী (স.)-এঁর কাছে আগমন করেন। এতে একটি কাল দাগ ছিল। রাসুলে মাকবুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন: হে জিবরাইল! এটি কিসের আয়না? জিবরাইল (আঃ) উত্তর দিলেন- এটা জুমার দিন সাদৃশ্য। আর কাল দাগটি প্রতি শুক্রবার দোয়া কবুল হওয়ার সময়।

আপনাকে এবং আপনার উম্মতকে এর দ্বারা (অর্থাৎ জুমার দিন দ্বারা) অন্যান্য উম্মতের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই দিনে এমন একটি সময় রয়েছে যখন প্রতিটি দোয়া কবুল হয়। কিন্তু আমাদের কাছে এটা একটি অতিরিক্ত দিন। হুযুর স. জিজ্ঞাসা করলেন: অতিরিক্ত দিনের কি অর্থÑ জিবরাইল (আঃ) উত্তর দিলেন, আল্লাহপাক বেহেশতে একটি ময়দান নির্ধারিত করে রেখেছেন, সেখানে মেশকের একটি টিলা (উচ্চস্থান) রয়েছে প্রতি জুমার দিনে সেখানে নূরের মিম্বার বিছিয়ে দেওয়া হয়।

এর ওপর আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) সমাসীন হন। অপর কতগুলো ইয়াকুত ও যবরজদ পাথর খচিত স্বর্ণের মিম্বারে সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও নেককারগণ উপবিষ্ট হন। মেশকের সে টিলায় সাধারণ জান্নাতিগণ বসেন। অতঃপর সকলে একত্রে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করেন। আল্লাহপাক ঘোষণা করবেন: তোমাদের যা চাওয়ার আছে চাও! তখন সকলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করবেন। আল্লাহপাক বলবেন: আমি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট আছি।

আমি তোমাদের আমার স্থানে বসবাস করার সুযোগ দিয়েছি এবং স্বীয় পক্ষ থেকে সম্মান করেছি। অতঃপর আল্লাহতায়ালার জ্যোতি (তাজাল্লি) প্রকাশ পাবে। আর তারা আল্লাহপাকের জ্যোতি দেখতে পাবে। সুতরাং এদিনে তাদের সম্মান বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কাছে জুমার দিন অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোনো দিন নাই।

×